গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। 

মুগ্ধ আন্দোলনের সময় ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পানি বিতরণ করছিলেন। সেই সময় হঠাৎ সংঘর্ষ বাঁধে এবং তিনি গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার কয়েকদিন পর মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। ভিডিওটিতে দেখা যায়, মুগ্ধ আন্দোলনকারীদের হাতে পানি তুলে দিচ্ছেন। এই ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং মুগ্ধর মৃত্যু নিয়ে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

আন্দোলনে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’। বর্তমানে এই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুগ্ধর জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মুগ্ধর মৃত্যু নিয়ে একটি বিতর্কিত দাবি ছড়িয়ে পড়ে। যেই পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, ‘মুগ্ধ মারা যাননি, মুগ্ধ নামে কেউ ছিলই না। এমনকি মুগ্ধ-স্নিগ্ধ দুই ভাই নয়, মুগ্ধই স্নিগ্ধ ছিল, মানুষ একজনই।’

মুগ্ধের মৃত্যুর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে সাপোর্টারস অব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে একটি গ্রুপের পোস্টে লেখা হয়, ‘মুগ্ধর ডেডবডির ছবি কেউ দেখে নাই, মুগ্ধর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, জানাজা, কবর কই?’

তবে ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে, মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ পৃথক দুই ব্যক্তি। তারা দুজন যমজ ভাই।

ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত মুগ্ধ ও স্নিগ্ধের একসঙ্গে তোলা অসংখ্য ছবি ও ভিডিওর বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে তারা।

এদিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পরিচালিত ফ্যাক্ট-চেকিং ফেসবুক পেজ থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুগ্ধকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া এই দাবিটি ভুয়া।

পেজটির এক পোস্টে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই, উত্তরার আজমপুরে বিক্ষোভকারীরা পিপাসার্ত হয়ে পড়লে তিনি তাদের জন্য পানি ও খাবার নিয়ে ছুটে যান।

পোস্টে আরও বলা হয়, মৃত্যুর ১৫ মিনিট আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় তিনি (মুগ্ধ) বিক্ষোভকারীদের পানির বোতল ও বিস্কুট বিতরণ করছেন। বিকেল ৫টার দিকে উত্তরার আজমপুর মোড়ে রাস্তার পাশে থাকা অবস্থায় তাকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার কপাল ভেদ করে মাথার ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তার মরদেহ উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এমএ