চলতি বছরের দশ মাসে (জানুয়ারি -অক্টোবর) শারীরিক নির্যাতন, সহিংসতা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয়েছে মোট ৪৮২ জন শিশু। ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে নিহত শিশুর সংখ্যা ছিল ৪২১ জন। গতবছরের তুলনায় চলতি বছরে শিশু হত্যা বেড়েছে ৬১ জন।

এছাড়াও চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৮০ জন শিশু। তবে ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে এর সংখ্যা ছিল ৯২০ জন। এর ফলে দেখা যায়, চলতি বছরে শিশু নির্যাতন অনেক কমেছে।

আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংলাপে এ তথ্য উঠে আসে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টেরি ডেস হোমসের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম কবিরের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রজেক্ট অফিসার শান্তা ইসলাম।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ (সিআরএসি,বি) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। সিআরএসি,বি দেশের প্রথম সারির ১৪টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিশু অধিকার প্লাটফর্ম, সংগঠন এবং ফোরামের সমন্বয়ে গঠিত।

সংলাপে উপস্থাপন করা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আসকের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১২১ জন শিশু মারা যায়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রজেক্ট অফিসার শান্তা ইসলাম বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ শিশু অধিকার রক্ষায় বেশকিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও শিশুদের পরিস্থিতি আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন করেনি কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ঘটেনি। এসব পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতা অনুপস্থিত। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত দিনের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আশাবাদ জাগ্রত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কোয়ালিশন মনে করে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে হলে শিশুদের জন্যও একটি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ নিশ্চিত করার উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। 

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টেরি ডেস হোমসের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম কবির বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত আমরা শিশুদের নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি পরিকল্পনা কিংবা পদক্ষেপ লক্ষ্য করছি না।

কোয়ালিশন মনে করে, জরুরি ভিত্তিতে অংশীজনদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলো আরও কার্যকর করা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং আরো নতুন নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আজকের শিশুরাই আগামীর তরুণ। তারাই দেশ ও জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই তাদের জন্য সুন্দর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মনোযোগ প্রদানের সময় এখনই।

ওএফএ/এনএফ