দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার পদোন্নতি নিয়ে প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত বাকি ২৫ ক্যাডারের উপসচিবদের কপাল খুলছে। এসব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী মোট চাকরিকাল এবং উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়সীমা বিবেচনা করে যুগ্মসচিব হিসেবে তাদের পদোন্নতির বিষয়ে সুখবর আসতে পারে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফ।

তিনি জানান, মোট চাকরিকাল ১৫ বছর হলে এবং উপসচিব হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করলে অথবা মোট চাকরিকাল ২০ বছরের বেশি হলে ও উপসচিব হিসেবে ৩ বছরের অধিক দায়িত্ব পালন করলে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির বিধান রয়েছে। সেই বিধান অনুযায়ীই ২৫ ক্যাডারের উপসচিবদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। এ বিষয় সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডকেও সদয় বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একান্ত আলাপকালে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানান নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফ।

তিনি বলেন, আমরা নিয়ম মেনেই পদোন্নতি দিচ্ছি। ২৫টি বিসিএস ব্যাচের যারা উপসচিব আছেন তাদের যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিতে উপসচিব পদে দুই বছর চাকরিকাল ছাড় দেওয়ার সুযোগ আছে। আমরা এই ছাড় দিয়ে তাদের পদোন্নতির বিষয়টি সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভায় তুলব। আশা করছি পজিটিভ ফল আসবে।

‘কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ে এমন নির্দেশনা রয়েছে। তারপর থেকে কে কোন ব্যাচের সঙ্গে উপসচিব হয়েছেন সেটা ধরে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অন্য ক্যাডার থেকে যারা উপসচিব হয়েছেন তাদের মূল ব্যাচ বিবেচনার সুযোগ নেই।’

মো. আব্দুর রউফ বলেন, ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের এবার যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। ২০২৫ সালে ২৫তম ব্যাচ এবং ২০২৬ সালে ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। কিন্তু অন্য ক্যাডার থেকে এসে ২৭তম ব্যাচের সঙ্গে যারা উপসচিব হয়েছেন তারাও এখন যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি চাইছেন। তাদের নিজস্ব ক্যাডারের সিনিয়রিটি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ তারা উপসচিব হতেই দেরি করে ফেলেছেন।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে ২৯তম ব্যাচ থেকে উপসচিব, ২২তম ব্যাচ থেকে যুগ্মসচিব এবং ১৭তম ব্যাচ থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ বছর ১৮তম ব্যাচ থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আর উপসচিব পদে পদোন্নতি পাবেন ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা।

‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে একটি নিয়ম রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যদি কারো মোট চাকরিকাল ১৫ বছর হয় এবং উপসচিব হিসেবে তিনি ৫ বছরের অধিক দায়িত্ব পালন করেন তাহলে তাকে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির দেওয়ার একটি বিধান রয়েছে। এ ছাড়া যদি কারো মোট চাকরিকাল ২০ বছর হয় এবং উপসচিব হিসেবে তিনি ৩ বছরের অধিক দায়িত্ব পালন করেন তাহলে তাকেও যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার একটি বিধান রয়েছে। আমরা এই সুবিধা দেওয়ার জন্য তাদের বিষয়টি এসএসবিতে তুলব। যদিও এ সুবিধা প্রশাসন ক্যাডারের কাউকে দিই না।’

চলতি এসএসবিতেই ২৫ ক্যাডারের উপসচিবদের পদোন্নতির বিষয় উঠবে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, গতকাল (রোববার) এসএসবি শুরু হয়েছে। এখনো প্রকৃত বঞ্চিতদের মধ্যে কয়েকজনকে পদোন্নতি দিতে পারিনি। বিভিন্ন কারণে তারা বাদ পড়েছিলেন। তাদের বিষয়টা নিয়েই বসা হয়েছিল। ২৫ ক্যাডারের উপসচিবদের জন্য আইনের মধ্যে থেকে সবচেয়ে অনুকূল কিছু করার চেষ্টা করব। চলতি এসএসবির দ্বিতীয় বা তৃতীয় কার্যদিবসে তাদের বিষয় চলে আসবে। এর বেশি সময় লাগবে না।

মো. আব্দুর রউফ বলেন, আমরা বিষয়টা ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করব। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখার জন্য ইতোমধ্যে বোর্ডকে বলেছি। বোর্ড দেখে একটি সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি বলেন, যারা একটু বেশি সিনিয়র এবং যারা একটু দেরিতে উপসচিব হয়েছেন তাদেরকে আমরা আগে বিবেচনা করব। আমরা তাদের জন্য সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করব।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল আপিল এনওএস ২৯৪-৯৮ অব ২০০৩-এ দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, যখনই কোনো কর্মকর্তা ২০০২ সনের বিধিমালা অনুসারে উপসচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হলেন, তা যেকোনো ক্যাডার হতেই হোক না কেন, তিনি তখন একজন পরিপূর্ণ উপসচিব। তার আগের ক্যাডার পরিচয় তখন বিলুপ্ত হবে। সচিবালয়ের উচ্চতর উপসচিব পদে তখন তিনি অধিষ্ঠান। সেই অধিষ্ঠা নিয়েই অন্য সব উপসচিবের সঙ্গে এক শ্রেণিভুক্ত হয়ে সমঅধিকার নিয়ে তিনি পরবর্তী উচ্চতর যুগ্মসচিব পদে বা পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন। তবে এসএসবি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণও আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ২৫ ক্যাডারের উপসচিবদের।

তাদের দাবি, বৈষম্যের শিকার ২৫ ক্যাডারের যেসব উপসচিব ইতোমধ্যে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছেন এবং এক বা একাধিকবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, গত ১৮ আগস্টের পদোন্নতি আদেশে তাদের বিবেচনায় না নিয়ে পুনরায় বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।

বৈষম্যের শিকার এসব উপসচিব বলছেন, মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য সত্ত্বেও ২৫টি ক্যাডারের মধ্যে ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের ১৯৫ কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠতা হারিয়ে তাদের অনেক জুনিয়র কর্মকর্তার অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। যা সব আইন ও বিধিমালার লঙ্ঘন এবং বৈষম্যহীন ও মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়তে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এ বিষয়ে ২৫ ক্যাডারের অন্যতম সমন্বয়ক ও উপসচিব ড. মো. নুরুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু ক্যাডার ভিত্তিক সিনিয়রদের নয়, যারা বিধি অনুযায়ী যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির যোগ্য তাদের সবাইকে পদোন্নতি দিতে হবে৷ একজন কর্মকর্তার সব যোগ্যতার থাকলেও কীভাবে তাকে বাদ দেবেন? যদি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ৷ আমার জানামতে আমাদের ১৯৪ জন উপসচিবের কারো বিরুদ্ধে এমন সমস্যা নেই এবং তারা সবাই পদোন্নতির যোগ্য৷ সুতরাং সময়ক্ষেপণ না করে অতিসত্বর আমাদের পদোন্নতি দিলে ভালো হয়৷

এর আগে বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা তাদের পদোন্নতির দাবিতে গত ১২ ও ১৪ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে স্মারকলিপি দিলেও এখনো কোনো সুরাহা মেলেনি।

এমএম/এসএসএইচ