গোলটেবিল বৈঠক
অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, বৈষম্যমূলক আইনের সংস্কার দাবি
সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা সংবিধানে বলা হলেও নাগরিক হিসেবে নারী এখনও অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বৈষম্য বিলোপে তাই বিচার বিভাগের কর্মপ্রক্রিয়ায় জেন্ডার সংবেদনশীল এবং নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি, অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনের সংস্কার, সংবিধানের ৪২ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে সবার সম্পদে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও নারী’ বিষয়ক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বিজ্ঞাপন
মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। মহিলা পরিষদের পক্ষে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।
আলোচনায় বক্তারা সমতাপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে প্রচলিত সংবিধান নতুনভাবে রচনার পরিবর্তে সংস্কার ও সংশোধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, বিচার বিভাগের কর্মপ্রক্রিয়ায় জেন্ডার সংবেদনশীল এবং নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি, অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনের সংস্কার, সংবিধানের ৪২ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে সকলের সম্পদে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
গণহত্যা চলাকালে নারীর প্রতি সংঘটিত সহিংসতার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেওয়াসহ, নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিকারে আইনি লড়াইয়ে আইনি সহায়তা প্রাপ্তি জোরদার, নারীর কর্মজীবনের স্বাধীনতা, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ, মব জাস্টিস দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. রওনক জাহান বলেন, নারী কমিশন ছাড়াও অন্যান্য যে ৫টি কমিশন হয়েছে সেখানে নারী কোথায় কোথায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং বৈষম্য নিরসনে করণীয় বিষয়ে সুপারিশমালা প্রেরণ করতে হবে। জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বাতিল হওয়া নারী কোটা ইস্যু, নারীর অধিকার ও সাইবার নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতে সকল নারী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, অভিন্ন পারিবারিক আইন কার্যকর করতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, মানবপাচার ও পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে নারীবান্ধব বিভিন্ন আইন থাকলেও আইনের প্রয়োগ ও নজরদারি কম। আইন বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভিকটিম বান্ধব সাপোর্ট সেন্টার গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত বলেন, সবাই আইনের চোখে সমান বলা হলেও মৌলিক অধিকারের নীতিতে সমতা কেন হলো না ও নারী-পুরুষের সমতা কেন অর্জিত হলো না তা পর্যবেক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের আইন বিভাগের অধ্যাপক ইমরান আজাদ সংবিধান রচনার প্রেক্ষাপট আলোচনা করে বলেন, সংবিধান একটি রাজনৈতিক দলিল। সংবিধানে পারিবারিক আইন বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, পরিবর্তিত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিবেচনায় রেখে সংবিধানের মান উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে, সংস্কার করার ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিতসহ সকল জাতিসত্তাকে অন্তর্ভুক্তকরণের ওপর জোর দিতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, সংবিধান এ দেশের সকল মুক্তিকামী মানুষের আত্মমর্যাদার প্রতীক এবং নারীর জন্য আলোকবর্তিকা। নারী-পুরুষের সমতার কথা সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও নারী আন্দোলনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও সেই সমতার লক্ষ্যে আমরা এখনো পৌঁছতে পারিনি।
জেইউ/এমজে