ঢামেকে হাতেনাতে ধরা মোবাইল চোর, গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মোবাইল চুরি করার সময় ফয়সাল নামে একজনকে আটক করেছেন ভুক্তভোগী। পরে সাধারণ মানুষ গণধোলাই দিয়ে তাকে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করেছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী সাদি জানান, আমার নতুন ভবনের ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডে রোগী চিকিৎসাধীন আছে। হঠাৎ করে একজন বেডের পাশে থাকা পোকো মোবাইলটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে আমি হাতেনাতে ধরে ফেলি। এরপর পুলিশের কাছে নিয়ে আসার সময় পাবলিক গণধোলাই দেয়। এরপর তারা হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করে। এসময় তার কাছে আমার মোবাইল ফোনটি পাই। পুলিশ ক্যাম্পে আরও ছয় জন মোবাইল চুরি হওয়া ভুক্তভোগী উপস্থিত রয়েছেন।
আরেক ভুক্তভোগী সজল জানান, আমার রোগী ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে বেড না পাওয়ায় সিঁড়ির র্যাম্পে ফ্লোরে চিকিৎসাধীন আছে। ভোরে বেডে থাকা আমার একটি রিয়েলমি ও একটি বাটন ফোন নিয়ে চোর যায়। খবর শুনে আমি পুলিশ ক্যাম্পে এসেছি।
মোবাইল চুরি হওয়া আরেক ভুক্তভোগী শাদিম জানান, দুপুরের দিকে ৮০২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আমার একটি রিয়েলমি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে যায় চোর। আমিও খবর শুনে পুলিশ ক্যাম্পে এসেছি।
আরও পড়ুন
মোবাইল চুরি হওয়া আরেক ভুক্তভোগী এনামুল জানান, দুপুরের দিকে ৯০২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আমার অপো মোবাইল চুরি হয়।
৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আরেক ভুক্তভোগী জাহিদা বলেন, আমি গরিব মানুষ এখানে চিকিৎসা করাতে এসেছি, আমার একটি বাটন ফোন নিয়ে চুরি করে নিয়ে গেছে। এমনিতেই এখানে চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যেই ফোনটি চুরি হয়ে গেল, সবার সাথে কীভাবে যোগাযোগ করব। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ফোনটি হারিয়ে গেল, কেনারও সামর্থ্য নেই।
প্রতিনিয়ত মোবাইল চুরি হচ্ছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মিজানুর রহমান বলেন, এখানে প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোন চুরি হচ্ছে, আবার আমরা এসব চোরকেও আটক করে পুলিশে সোপর্দ করছি। এখানে সারা দেশ থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন আসেন। কে রোগীর লোক আর কে চোর সেটা বোঝা মুশকিল। হাসপাতাল থেকে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে একজনকে অ্যাটেনডেন্স পাস দেওয়া হয়। কিন্তু ওয়ার্ডে গেলে দেখা যায় এক রোগীর সঙ্গে অনেক লোক থাকেন।
তিনি আরও জানান, এখানে এমন চোর আছে যাকে প্রায়ই ধরে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর কি হয় সেটি আমরা বলতে পারি না। এখানে এমন অনেক চোরও আছে যারা পকেটে একটি টিকিট কেটে রাখে, তাদের আটক করলে দেখায় এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছে। এটা দিয়ে তারা অভিনব কায়দায় চুরিকে হালাল করতে চায়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পিসি বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাসপাতালে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু এখানে রোগীদেরও সচেতনের একটি বিষয় আছে। রোগীর অপরিচিত কেউ পাশে এসে বসলে বা সন্দেহ হলে আমাদের জানানো উচিত। দেখেন গতকাল অ্যাপ্রোন পরা এক নারীকে আমরা ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে ধরেছি। তাকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে তিনি চিকিৎসক নন।
হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, দেখেন আজ ফয়সাল নামের এক চোরকে মোবাইল চুরির অপরাধে আমাদের পুলিশ ক্যাম্পে দিয়ে গেছে। এখানে ছয় জন ভুক্তভোগী এসেছেন, তারা জানিয়েছেন তাদের মোবাইল চুরি হয়েছে। কিন্তু কেউ বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ বা মামলা করতে চান না। তাহলে আমরা তাদের কি করব। আজ যে চোরকে ধরা হয়েছে কয়েকদিন আগেও তাকে আটক করে পুলিশ ক্যাম্পে দেওয়া হয়। সে আজ আবারও মোবাইল ফোন চুরি করতে এসেছে। এখানে একটি বিষয় হচ্ছে বাদী না থাকায় তারা আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোন হারিয়েছে কিন্তু তারা মামলা বা অভিযোগ করতে রাজি নয়।
এসএএ/এসএসএইচ