খাস জমির পাশাপাশি সরকারি অন্যান্য সংস্থার জমির খোঁজে নেমেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই জমি খোঁজার বিষয়ে প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর ইসিকে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশনা দিয়েছেন সচিব শফিউল আজিম। 

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

সভায় জানানো হয়, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংরক্ষণের জন্য ওয়‍্যারহাউজ নির্মাণের লক্ষ্যে আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ের খাস জমি খোঁজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি অন্যান্য সংস্থার জমিও দেখে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান আছে বলে সভায় জানানো হয়। 

সভায় ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, সব আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওয়‍্যারহাউজ নির্মাণের জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

বর্তমানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইভিএম সংরক্ষিত আছে এবং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের নিচতলা স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় আছে। এতে ইভিএমগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইভিএম সংরক্ষিত থাকায় সেসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদানেও অসুবিধা হচ্ছে। এই অবস্থায় ১০টি অঞ্চলে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়ারহাউজ তৈরি করার প্রতি জোর দেয় ইসি। নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক ১০টি অঞ্চল তথা ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী ও ঢাকায় একটি ওয়্যারহাউজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে উন্নতমানে এই ভোট যন্ত্রগুলোর সুরক্ষায় ইসির কোনো সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই।

জানা গেছে, এক-এগার সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোট যন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় ও উন্নতমানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা রেখে যায়।

এরপর ২০১৭ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেন তারা। এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প। 

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এসে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজার মেশিনের মধ্যে অধিকাংশগুলোতে ধরা পড়ে নানা ধরনের ত্রুটি। কিন্তু মেরামতের জন্য ছিল না নতুন কোনো অর্থের যোগান। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য সাড়ে ১২শ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে বৈশ্বিক অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার সেটি নাকচ করে দেয়। বর্তমানে অকেজো ইভিএমের সংখ্যা আরো বেড়েছে।

এসআর/জেডএস