বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১৪ জন মানুষ প্রাণ হারান। আর বিশ্বব্যাপী দৈনিক এক হাজারের বেশি শিশু এবং ৩০ বছরের কম বয়সী যুবক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। জাতিসংঘ নির্ধারিত নিরাপত্তা কৌশল অনুসরণ করে এসব প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের দাবি, বাস চালকদের অসম প্রতিযোগিতাই এসব সড়ক দুর্ঘটনার প্রথম ও প্রধান কারণ। এ অবস্থায় বর্তমান সংস্কার ভাবনায় সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের জরুরি বলেও জানান তারা।

রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিআরটিএ ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমবারেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিক্টিমস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, বাস চালকদের অসম প্রতিযোগিতার কারণে ঢাকা শহরে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়। তাই সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে জরুরিভাবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে বাস চালকরা অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হন। সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। জাতিসংঘ নির্ধারিত নিরাপত্তা কৌশল অনুসরণ করে এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু কমানো সম্ভব।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে ‘ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমব্রেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিক্টিমস’ দিবস পালন করেছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘আমরা স্মরণ করি যারা রোডক্র্যাশে মারা গেছেন তাদের, সহায়তা নিয়ে থাকতে চাই আহতদের পাশে এবং জীবন বাঁচাতে নিতে চাই কার্যকর উদ্যোগ’।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী ও গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর ড. মো. শরিফুল আলম।

সভায় বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন এক হাজারের বেশি শিশু এবং ৩০ বছরের কম বয়সী যুবক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ১৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। অথচ এই মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। জাতিসংঘ নির্ধারিত নিরাপত্তা কৌশল অনুসরণ করে এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু কমানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন।

তারা আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আমাদের দাবি, সড়ক নিরাপত্তার সংস্কার ভাবনায় সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করতে হবে।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, আমাদের দেশে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যাই হোক না কেন সড়কে প্রাণহানি ঘটছে, এটা সত্য। অথচ এটা প্রতিরোধযোগ্য। তাই উন্নত দেশের মতো জাতিসংঘ স্বীকৃত নিরাপত্তা কৌশল অনুসরণ করে সড়ক নিরাপত্তা আইন করা প্রয়োজন।

গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের ইন-কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর ড. শরিফুল আলম বলেন, সমস্যার প্রকৃত সমাধান করতে হলে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে হলে প্রথমেই সড়কে প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা উদঘাটন করে এর সমাধান করা প্রয়োজন। তাই সড়ককে নিরাপদ করতে আলাদা করে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা জরুরি।

সভাপতির বক্তব্যে বিআরটিএর চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মো. ইয়াসীন বলেন, সড়ককে নিরাপদ করতে সবার একযোগে কাজ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার সচেতন হতে হবে। বর্তমান সংস্কার ভাবনায় পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের ব্যাপারে বিআরটিএর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

মতবিনিময় সভায় প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোড সেফটি অ্যান্ড ইনজুরি প্রিভেনশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার মোহাম্মদ ওয়ালী নোমান।

মতবিনিময় সভায় হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ইকবাল হোসাইন, বিআরটিএর রোড সেফটি পরিচালক গোলাম মাহবুব ই রাব্বানি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী, রোড সেফটি অ্যান্ড ইনজুরি প্রিভেনশন প্রোগ্রামের পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান ভুঁইয়া, ডা. আহমেদ খাইরুল আবরার, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির প্রতিনিধি, বাংলাদেশ রোড সেফটি কোয়ালিশনের সদস্যরা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

টিআই/এসএসএইচ