মানহীন বিদে‌শি পণ্যের বি‌ক্রি ঠেকাতে সরকারের নীতিমালা রয়েছে। তবে নী‌তিমালা থাকা সত্ত্বেও দেশে অবৈধ পথে মানহীন পণ্য প্রবেশ করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সং‌শ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মানহীন বি‌দে‌শি পণ্যে কীভাবে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স পেয়ে দেশে প্রবেশ করছে সে বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে।

বৃহস্প‌তিবার (১৪ ন‌ভেম্বর) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মিলনায়তনে ‘মানহীন বিদেশি পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন নাকি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মানসম্মত পণ্য : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’- শীর্ষক এক সেমিনার এ প্রশ্ন তু‌লে‌ছেন বক্তারা।

ভোক্তা অধিকার মহাপরিচালক আলিম আখতার বলেন, ফর্সা কখনও সুন্দ‌রের মাফকা‌ঠি হ‌তে পা‌রে না। সৌন্দর্য হলো কীভাবে আপনি আপনাকে উপস্থাপন করছেন। মানহীন কস‌মে‌টিকস ব্যবহা‌রের কার‌ণে স্কি‌নের বি‌ভিন্ন ধর‌নের রোগ হয়, মানুষ অসুস্থ হয়। আমাদের কসমেটিকসে বিশ্ব মানের পণ্য উৎপাদন করে বাজার বাড়াতে হবে। মানসম্মত পণ্য উৎপাদন নি‌শ্চিত করা জরু‌রি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সা‌বেক প‌রিচালক মোহাম্মদ ইশহাকুল হোসেন সুইট ব‌লেন, সরকার নী‌তি ক‌রে মানহীন প‌ণ্যের বি‌ক্রি ঠেকা‌তে চান। তাহ‌লে বি‌দে‌শি মানহীন পণ্য আসল কি ক‌রে? এই পণ্য কীভাবে কাস্টমস ক্লিয়া‌রেন্স হয়? এটা সরকা‌রের নী‌তি নির্ধারকদের বের কর‌তে হ‌বে। দেশে হালাল কস‌মে‌টিক‌সের ইন্ড্রা‌স্টি গ‌ড়ে তুল‌তে হ‌বে। 

ভোক্তা অধিকার পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মনোয়ার ব‌লেন, মানহীন পণ্য যেন বাজা‌রে না থা‌কে সেজন্য প্রচার-প্রচারণা বাড়া‌তে হ‌বে। মানহীন পণ্য কি‌নে ক্রেতা য‌দি ঠ‌কে কোম্পা‌রি বিরু‌দ্ধে অ্যাকশনে যে‌তে পা‌রে ভোক্তা। ক্রেতার অ‌ভি‌যোগ প্রমাণিত হ‌লে ২৫ পার‌সেন্ট অর্থ দেওয়ার বিধান র‌য়ে‌ছে। এ ছাড়া, দে‌শে মানহীন প‌ণ্যের উৎপাদন, বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ যেন না হয় সেজন্য নীতিমালা র‌য়ে‌ছে। বাজার তদার‌কি কর‌তে গি‌য়ে দেখা যায়, বাজা‌রে যেসব কসমেটিকস দেখ‌তে পাই তার বে‌শিরভাগ নকল। মানহীন পণ্য প্রতিরোধে সবার এগিয়ে আসতে হ‌বে।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জামাল উদ্দিন। তি‌নি ব‌লেন, বিদেশ থেকে যেসব পণ্য আসে এগু‌লোর বে‌শিরভাগ খুব নিম্নমানের। দেখা যায়, এসব বেশিরভাগ প‌ণ্যের মেয়াদ নাই। আমা‌দের দে‌শেই মানসম্মত কস‌মে‌টিক পণ্য উৎপাদন কর‌তে হ‌বে।

চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ বলেন, সৌ‌ন্দে‌র্যের স্ট্যান্ডার্ড ঠিক ক‌রে দেওয়া ফর্সার ভিত্তিতে। সুন্দর মা‌নে ফর্সা। ফর্সার স‌ঙ্গে সৌন্দর্য কো‌নো সম্পর্ক নাই। আমা‌দের ক্রেতার কথা ভাব‌তে হ‌বে। মানুষকে ফর্সা করার নামে মার্কেটে আসল নকল পণ্য চেয়ে গেছে। নকল পণ্য ব্যবহার করলে স্কিন ক্যান্সার হতে পরে। আমদানি নির্ভর একটা খাতকে কীভাবে আমরা রপ্তানি নির্ভর করতে পারব তা আমাদের দেখতে হবে। আমাদের নিজেদের ব্র্যান্ড বিশ্বের মানুষ ব্যবহার করবে।

বিএসটিআই-এর কর্মকর্তা ন‌ভেরা বিন‌তে নূর ব‌লেন, ২৯ কসমেটিক পণ্য বিএসটিআইয়ের অনু‌মোদন নিয়ে বাজারজাতকরণ প্রয়োজন। অবৈধ পথে যে পণ্য আসে সেগুলোর বিষয়ে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। ক্ষতিকর ১৮ ব্র্যান্ড কে আমরা নিষিদ্ধ করেছি। আমার প্যারাগন টেস্টের জন্য বিভিন্ন স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি।

স্কিন কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. সামিনা হক বলেন, স্কিন নকল পণ্য ব্যবহা‌র করলে অনেক ক্ষতি হয়। স্কিনে প্রতিক্রিয়া হয়ে অনেক বড় রোগ হয়। আমাদের দেশে মানসম্মত কস‌মে‌টিকের উৎপাদন বাড়া‌তে হ‌বে।

অভিনেতা মামনুন হাসান ইমন বলেন, সবাই সুন্দর হ‌তে চায়। সবাই নি‌জের প্রতি যত্নশীল। পুরান ঢাকায় আটা-ময়দা মিশিয়ে নকল কসমেটিক পণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য ব্যবহারে মানুষের ক্যান্সার হচ্ছে। এইসব নকল পণ্য ব্যবহার বন্ধে আরও জোরালো হওয়া উচিত। 

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির ব‌লেন, অ‌বৈধ কস‌মে‌টিক ব্যবহার ব‌ন্ধে প্রচার-প্রচারণা বাড়া‌তে হ‌বে। আইনগত ব্যবস্থা নি‌তে হ‌বে যা‌তে এটা বন্ধ কর‌তে হ‌বে। বাররবার কেন মা‌ঠে নাম‌তে হ‌বে, জ‌রিমানা কর‌তে হ‌বে। দেশীয় প্রোডাক্ট তৈ‌রি কর‌তে হ‌বে।

এনআই/এসএম