বাংলাদেশ তার জ্বালানি ভবিষ্যতের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে ব্যয়বহুল ও দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি গ্যাস আমদানির বর্তমান পথ থেকে সরে আসার একটা সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। বিদেশিদের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি তৈরি করছে। আমদানি করা গ্যাস ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সংকট এবং রোলিং ব্ল্যাকআউটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত  ‘ব্যয়বহুল এলএনজির বিস্তার : বিদেশিদের এলএনজি সংক্রান্ত স্বার্থ যেভাবে বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি তৈরি করছে’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মার্কেট ফোর্সেস, ফসিল ফ্রি চট্টগ্রাম, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ওয়াটারকিপার্সের কো-অর্ডিনেটর শরীফ জামিল, এশিয়া এনার্জি অ্যানালিস্টের মুনিরা চৌধুরী, আইইইএফএর লিড অ্যানালিস্ট শফিকুল আলম, থ্রীফিফটির আমানুল্লাহ পরাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব, সবুজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হতে পারে। এটা পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণের জন্য কম মূল্যে সাশ্রয়ী বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য পরিচ্ছন্ন ও সবুজ জ্বালানিতে উত্তরণের উপায় হিসেবে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন– কয়লা ও এলএনজি, যা আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারের অস্থিরতার ওপর নির্ভরশীল, তার ব্যবহার কমাতে হবে; সব ধরনের প্রস্তাবিত এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং এলএনজি আমদানি অবকাঠামো পরিকল্পনা প্রত্যাহার করতে হবে; জাপানের জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিক্স জাপান (আইইইজে) দ্বারা প্রণীত এসএনজি-নির্ভর মাস্টার প্ল্যান সংশোধন করা প্রয়োজন; পরিকল্পিত এলএনজি প্রকল্পগুলোর তহবিল নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং গ্রিড অবকাঠামোর উন্নয়নে পুনর্নির্দেশ করা প্রয়োজন; একটি আধুনিক গ্রিড এবং উন্নত ট্রান্সমিশন অবকাঠামো গড়ে তোলার দিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারকে সমর্থন করবে।

অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, এলএনজি একদিকে আর্থিক বোঝা আরেকদিকে পরিবেশগত বিপর্যয়। বাংলাদেশকে অবশ্যই আমদানি করা এলএনজি এবং বিদেশি স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত বিদ্যুৎ পরিকল্পনা থেকে সরে এসে দেশীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের পথ অনুসরণ করতে হবে। এটি দেশে জীবিকা রক্ষা করবে, স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করবে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, পাশাপাশি জ্বালানি আমদানির উচ্চ খরচ থেকেও রক্ষা করবে।

জ্বালানি নীতি যেন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে না হয়, সেই আহ্বান জানান তিনি।

ওএফএ/এসএসএইচ