# দুইজন ছাড়া কেউ মানেনি বদলির আদেশ
# আদেশ বাতিল বিভিন্ন মহল থেকে করা হচ্ছে তদবির
# আদেশ অমান্য করা শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল : কলিমউল্লাহ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের বদলি আদেশ মানছেন না সচিবালয়ের আওতাধীন কর্মকর্তারা। ইসি সচিবালয় গত এক মাসে তিনটি আদেশে সাতজনকে বদলি করলেও মাত্র দুইজন কর্মকর্তা সচিবালয়ের আদেশ মেনে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। বাকি পাঁচজনই ইসির বদলি আদেশের কর্ণপাত করছেন না। অথচ বদলির আদেশে বলা হয়েছে, “জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, যারা দীর্ঘদিন একই জায়গায় কাজ করছেন বা সচিবালয় অথবা নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) কর্মরত রয়েছেন, সেসব কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে বদলি করছে সচিবালয়। গত এক মাসে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও ইটিআই থেকে মোট সাত কর্মকর্তাকে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর মধ্যে মাত্র দুইজন কর্মকর্তা ইসির বদলির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নতুন কর্মস্থলে যোগ দেন। বাকি পাঁচজন কর্মকর্তা এখনও বদলি হওয়া কর্মস্থলে যোগ দেননি। এই কর্মকর্তারা বদলির আদেশ বাতিল করতে নির্বাচন কমিশন সচিবকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন। সাবেক সচিব, বর্তমান সচিব এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন বড় বড় নেতাদের দিয়ে ফোন দিয়ে সচিবকে বদলির প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে চাপ দিচ্ছেন বলে জানান কর্মকর্তারা।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমান বদলির আদেশের এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই প্রজ্ঞাপনে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রশাসন শাখার পরিচালক জিএম সাহাতাব উদ্দিনকে বদলি করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে উপসচিব করা হয়। এই একই প্রজ্ঞাপনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলমকে বদলি করে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক করা হয়। এই দুইজনের মধ্যে একজন বদলি হওয়া নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গত ১৪ অক্টোবর পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন ইসির সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমান। দুটি আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত আঞ্চলিক ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সোহেল সামাদকে বদলি করে ফরিদপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা করা হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপনে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব সহিদ আব্দুস ছালামকে বদলি করে রাজশাহীর অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা করা হয়। এছাড়া এই একই প্রজ্ঞাপনে ফরিদপুরের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে বদলি করে রাজশাহীর অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা করা হয়। এই প্রজ্ঞাপনের তিনজনের মধ্যে একজন বদলি হওয়া নতুন কর্মস্থলে যোগ দিলেও বাকি দুইজন যোগ দেননি।

এছাড়া ১৪ অক্টোবর আলাদা এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সহকারী পরিচালক মো. রশিদ মিয়াকে বদলি করে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা করা হয় এবং নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে বদলি করে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা করা হয়।

এই দুইজনের মধ্যে কেউই বদলি হওয়া নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। বিভিন্ন বড় বড় জায়গা থেকে তদবির আসার কারণে এই দুই কর্মকর্তার বদলির আদেশ বাতিল হতে পারে। তবে যেহেতু সচিব এখনও কোনো বদলির আদেশ বাতিল করেননি, সেহেতু এই দুই কর্মকর্তা আদেশ বাতিল হওয়া নিয়েও সন্দেহ আছে। কারণ সচিব বর্তমানে বদলি-পদায়নের তদবির নিয়ে হার্ডলাইনে চলে গেছেন।

ইসি কর্মকর্তারা বলেন, বদলি হওয়া এই সাত কর্মকর্তার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সোহেল সামাদ ফরিদপুরে অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম বদলি হওয়া নতুন কর্মস্থল নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছে। বাকি পাঁচজনের কেউই তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি।  

এদিকে, গত ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর ২ মাসে বাংলাদেশ পুলিশের অনেক কর্মকর্তাকে নতুন কর্মস্থলে বদলি করা হয়েছে। বদলির আদেশে তাদের ‘অবিলম্বে’ যোগদানের কথা বলা হলেও অনেকেই যোগদান করেননি। পুলিশের যাদের বদলি করা হয়েছে এবং যারা বদলি হওয়া নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। তবে এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের আদেশ না মানা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবে সংস্থাটি, সেটিই দেখার বিষয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. শফিউল আজিমকে একাধিক ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

বদলির আদেশ হওয়ার পরও কর্মকর্তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করার প্রসঙ্গে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সারাদেশের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। সেটার ইমপ্যাক্ট সর্বত্রই আছে এবং এটাই স্বাভাবিক। সে কারণে সবাই এই জ্বরে ভুগছেন। এটা তারই অংশ বলে আমি মনে করি। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক বডি, সেই সংবিধানই এখন সংকটের মুখে। বাতিল হয়ে যেতে পারে। পুনর্লিখন কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। সবকিছুই নড়বড়ে। এরকম একটি পরিবেশে, এরকম একটি পটভূমিতে এই ধরনের আচরণ অত্যন্ত স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু বর্তমানে কমিশন নাই, সেহেতু সচিবই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। তার আদেশ অমান্য করা মানে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। কিন্তু সেটা কার্যকর করার যেই শক্তিটা দরকার, সেটাও আছে কিনা দেখতে হবে। বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুযোগ কম। কমিশন নেই বিধায় সুযোগ নিচ্ছেন কর্মকর্তারা বলে জানান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।’

এসআর/এসএম