সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস/ সংগৃহীত

সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ (শনিবার) বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।  

এ সময় নারী ফুটবল দলের সদস্যরা তাদের স্বপ্ন ও খেলোয়াড় জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রামের কথা প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন। অধ্যাপক ইউনূস বিজয়ী খেলোয়াড়দের বিভিন্ন দাবি ও কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।

গত ৩০ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে সপ্তম সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে পরাজিত করে শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ। এই সাফল্যে দারুণ খুশি প্রধান উপদেষ্টা নারী ফুটবলারদের বলেন, ‘আমি পুরো জাতির পক্ষ থেকে তোমাদের অভিনন্দন জানাই। জাতি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়, আর তোমরা সেই সাফল্য এনে দিয়েছ।’

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। অনেক বাধা পেরিয়ে আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। শুধু এই ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের নারীদের সামগ্রিকভাবে নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’

টানা ২য় বারের মতো সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার কথা জানাচ্ছেন/ সংগৃহীত

সাবিনা বলেন, ‘আমাদের অনেকে সাধারণ পরিবার থেকে এসেছে এবং তাদের নিজেদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হয়। আমাদের বেতন খুব বেশি নয়। এই বেতন দিয়ে পরিবারকে তেমন কোনো সাহায্য করতে পারি না।’

এই তারকা স্ট্রাইকার তার কয়েকজন সহযোদ্ধার সংগ্রামের গল্প, যেমন মারিয়া মান্দার কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলসিন্দুর গ্রামের মারিয়া, যেখান থেকে সাফজয়ী দলের ছয়জন খেলোয়াড় এসেছেন, ছোটবেলায় তার বাবাকে হারান এবং মা তাকে বড় করেন।

উইঙ্গার কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকায় তাদের আবাসন সমস্যার কথা উল্লেখ করেন, আর মিডফিল্ডার মানিকা চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার দুর্গম লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ফুটবলার হিসেবে উঠে আসার সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।

মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী তার নিজ জেলা দিনাজপুরের রানীশংকৈল উপজেলায় তার গ্রামের দুর্বল অবকাঠামোর কথা বলেন।

কৃষ্ণা রানী প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেন যেন তাদের জন্য এশিয়ার বাইরে একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হয়, বিশেষ করে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বার্সেলোনার সঙ্গে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিনায়কসহ কয়েকজন, ডানে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ/ সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তাদের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তাদের বিভিন্ন দাবি আলাদাভাবে কাগজে লিখে তার কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তোমরা যা কিছু চাও তা লিখতে দ্বিধা করো না, আমরা তোমাদের দাবিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করব। যদি কিছু এখনই করা সম্ভব হয়, আমরা তা করব।’  

জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার এবং ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।  

এমএসআই/এমএ/এনএফ