‘১৭ বছর শিকলবন্দি জীবন’ অমানবিক, সরেজমিনে তদন্তের নির্দেশ
‘১৭ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন হোসেন আলীর’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলছে, বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রায় ১৭ বছর ধরে একজন ব্যক্তিকে শিকলবন্দি করে রাখার অভিযোগটি অত্যন্ত অমানবিক।
বিজ্ঞাপন
ঘটনাটি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন বুধবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিশনে চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ওই ব্যক্তির মর্যাদাপূর্ণ জীবন এবং চলাফেরার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সচেতনতার অভাবে আমাদের সমাজে প্রায়ই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহজাত মর্যাদা ও সমতা নিশ্চিত করা হয় না। অন্যদের মতোই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমতার ভিত্তিতে সামাজিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে সক্ষম।
গৃহীত সুয়োমটোতে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের বরাতে উল্লেখ রয়েছে, সাতক্ষীরার তালায় প্রায় ১৭ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন হোসেন আলী সরদার (২৪)। জন্ম থেকে বাক্ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় অন্যত্র চলে যাওয়ার ভয়ে তাকে প্রতিদিন বাড়ির পেছনে রাস্তার ধারে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।
আরও পড়ুন
চিকিৎসকের বরাতে সংবাদে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয়ভাবে তার ভালো চিকিৎসা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব। তবে বয়স বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, বাক্ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রায় ১৭ বছর ধরে একজন ব্যক্তিকে শিকলবন্দি করে রাখার অভিযোগটি অত্যন্ত অমানবিক। বাক্ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হলেও তার চলাফেরার অধিকার রয়েছে। এ অবস্থায় সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক অভিযোগের বিষয়টি বিশেষ করে সরকারি সুযোগ সুবিধা; স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির ভূমিকা; স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকাসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মানবাধিকার কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে খুলনা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।
অ্যান্টিভেনম থাকা সত্ত্বেও না পেয়ে সাপে কাটা শিশুর মৃত্যু : তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ
অন্যদিকে, অ্যান্টিভেনম থাকা স্বত্বেও না পেয়ে ঈসাদ নামক যুবকের মৃত্যুর ঘটনার প্রকাশিত সংবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
কমিশন বলছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম থাকা সত্ত্বেও সেবাপ্রার্থীর চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার অভিযোগ অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক।
সুয়োমটোর প্রেক্ষিতে কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির অধিকার মৌলিক মানবাধিকার। কোনো ধরনের গাফলতি বা অব্যবস্থাপনায় যদি তা বিঘ্নিত হয় সেটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান স্বাক্ষরিত অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গৃহীত সুয়োমটোতে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের বরাতে উল্লেখ রয়েছে, বিষধর সাপে দংশিত হওয়ায় বাকপ্রতিবন্ধী স্কুল পড়ুয়া এক শিশুকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তবে সেখানে তাকে অ্যান্টিভেনম না দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পথে মৃত্যু হয় ১০ বছরের শিশু ঈসাদ ভূঁইয়ার।
ঈসাদ উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের পানিয়ারুপ গ্রামের মানসিক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী আমিন ভূঁইয়ার ছেলে। গত ২৭ অক্টোবর বাড়ির কাছে খেলাধুলা করার সময় বিষধর সাপে দংশন করে তাকে। তার চিৎকার ও কান্নাকাটির এক পর্যায়ে বাড়ির লোকজন পায়ে ক্ষত পান। দুটি দাগ দেখে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন, তাকে সাপে দংশন করেছে। দুপুর ২টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
তবে জরুরি বিভাগে দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানান, অ্যান্টিভেনম নেই। তারা চিকিৎসা না দিয়ে ও রেজিস্ট্রার খাতায় নাম না লিখে কুমিল্লায় যেতে বলেন। এসময় কসবার ওষুধের দোকানেও অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম আছে।
একই কথা বলেছেন ঘটনার দিন দায়িত্বে থাকা ডা. আকিব ইকরাম। তার ভাষ্য, ঘটনার সময় তিনি দুপুরের খাবার খেতে বাসায় ছিলেন। জরুরি বিভাগ থেকে বিষধর সাপে দংশনের রোগী এসেছে কি না জানানো হয়নি।
সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লিখিত কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আকিব ইকরামের অনুপস্থিতির বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অ্যান্টিভেনম না পেয়ে শিশু ঈসাদ ভূঁইয়ার মৃত্যুর দায় কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে গ্রামাঞ্চলে সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর খবর প্রায়ই প্রচারিত হয়, একইসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে অ্যান্টিভেনম না থাকার বিষয়টিও ওঠে আসে। সাপে কাটার খবর বেশিরভাগ সময়ে গ্রামাঞ্চলে হলেও সেখানে অ্যান্টিভেনম না পাওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য।
সুয়োমটো আদেশে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আকিব ইকরামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জনকে বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি প্রয়োজনীয় কার্যার্থে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালককে দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টিভেনম প্রাপ্যতা এবং চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বলা হয়েছে।
জেইউ/এসএসএইচ