মেয়েদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে স্পর্শকাতর ছবি হাতিয়ে নিতেন হ্যাকার মো. ফজলে হাসান অনিক (২৪)। তারপর সেসব ছবি ভুক্তভোগীকে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন অর্থ। সেসব অর্থ দিয়ে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি গার্লফ্রেন্ডের খরচও বহন করতেন হ্যাকার অনিক।

গত দুই বছরে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অন্তত ১৫ জনকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করেছেন অনিক। অবশেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের হাতে ধরা খেয়েছেন এই হ্যাকার।

গতকাল রোববার রাজধানীর উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অভিযান চালিয়ে মো. ফজলে হাসান অনিককে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ সময় তার কাছ থেকে অপরাধে ব্যবহৃত ১টি মোবাইল ও ১টি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার মো. ফজলে হাসান অনিক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের নেংটাদাহ গ্রামে। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) এই বিষয়ে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) ডিআইজি এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

ব্রিফিংয়ে এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার হ্যাকার গত ২ বছর ধরে অর্ধশতাধিক ভিকটিমের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করেছে এবং১৫ জনের অধিক ভিকটিমের ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, এই হ্যাকারের বিরুদ্ধে একজন ভুক্তভোগী সিআইডি সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে অভিযোগ দেন। একই সঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন থেকেও একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার ছায়া তদন্ত করে অপরাধের ধরন ও হ্যাকারকে শনাক্ত করে।

হ্যাকিং সম্পর্কে এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর আগস্ট মাসে ভুক্তভোগীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে একটি লিংক আসে। না বুঝেই ওই লিংকে ক্লিক করে ফেসবুক ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করেন। ঠিক তখনই ঘটে বিপত্তি, ভিকটিমের ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড চলে যায় হ্যাকারের দখলে। হ্যাকার ভিকটিমের ফেসবুকের ম্যাসেজার থেকে কিছু ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেন। পরে হ্যাকার ভিকটিমের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও তার আত্মীয় স্বজন ও পরিচিত লোকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কয়েক ধাপে কৌশলে হ্যাকারের পরিচয় গোপন রাখার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপরেও যখন টাকার দরকার হতো তখনই ভিকটিমকে ব্ল্যাকমেইল করতেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, হ্যাকার অনিকের গার্লফ্রেন্ডের সমস্ত খরচ সে এভাবে আইডি হ্যাক করে ব্ল্যাকমেইল করে চালাতো। সে এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। পুলিশ যাতে ধরতে না পারে, এ জন্য সে কোনো বিকাশ নগদে টাকা না নিয়ে বিভিন্ন সুপার শপে যেতো। শপে কেনাকাটা করে ভুক্তভোগীদের বলতো বিকাশ বা নগদে বিল দিতে। আরেকভাবে সে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা নিতেন। তার বাইন্যান্স অ্যাকাউন্ট আছে, ওই অ্যাকাউন্টে সে টাকা নিয়ে নিতেন। যার কারণে তাকে সহজে ট্রেস করা যেতো না। আমরা বিভিন্ন টেকনোলজি ব্যবহার করে তাকে ট্রেস করেছি।

এমএসি/এমএ