মধ্য জুলাইয়ে যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল দেশ, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সারা দেশের রাজপথ, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ে একাট্টা; ঠিক সেই সময় ১৬ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত মুখ ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ছাত্র আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন।

সেদিন ব্যারিস্টার সুমন বলেছিলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন যেহেতু উচ্চ আদালতের মীমাংসার জন্য রয়েছে তাই আর একটা মাস অপেক্ষা করার জন্য আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ এই ইস্যুতে নিজেদের মুখোমুখি না ভেবে সংযত আচরণ করতে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের ভাবমূতি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চলছে দাবি করে সুমন বলেন, আমি সাবেক একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে বলবো, ছাত্রলীগ এ আন্দোলনে আরও সহনশীল ও ধৈর্যের পরিচয় দেবে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো যড়যন্ত্রে যেন পা না দেয়।

একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আর একটা মাস ধৈর্য ধারণ করার আহ্বার জানিয়ে সুমন বলেন, তোমরা আর একটা মাস অপেক্ষা কর। হাইকোর্ট ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে। বিষয়টি এখন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আর একমাসের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। এ সময়টুকু তোমরা অপেক্ষা কর। এরপর যদি তোমাদের বিরুদ্ধে যায় তাহলে তোমরা আন্দোলন কর। এখন আন্দোলন করে তোমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করো না।

ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেছিলেন, আমি সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য এখানে আসিনি। এখন ফেসবুকটা এমন অবস্থা, আমাকে তো প্রধানমন্ত্রী ফেসবুক এমপি বলতেন। আমি ফেসবুক এমপি হিসেবে থাকতাম এবং সরকারের বিরুদ্ধে আজকে একটা কথা বললে কালকে বলবেন সুমনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। আমি তো ওই প্রধানমন্ত্রী হতে এখানে আসিনি।

ব্যারিস্টার সুমন বলেছিলেন, আমার রাইট, রঙ সব বোঝার ক্ষমতা আছে। আমি পড়াশোনা করে ব্যারিস্টার হয়েছি। আপনারা বলতে পারেন, আপনার পড়াশোনার মান খুবই খারাপ। কিন্তু এটা আপনাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই? আপনারা প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করাতে চান, কিন্তু আপনাদের আন্দোলন তো পুরোটাই জামায়াত-বিএনপির হাতে চলে গেছে। তাইলে আপনারা জামায়াতকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন, তারেককে ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন। তিনি তো দণ্ডপ্রাপ্ত।

এক দফার সমালোচনা করে সুমন আরও বলেছিলেন, আজকে আপনারা একদফা চাচ্ছেন। আপনাদের একদফা কি? মনে করেন আপনাদের একদফা আমি মেনে নিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে আপনি পদত্যাগ করেন। ছাত্ররা মারা যাচ্ছে। স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে আমি তাকে বললাম। আজ যা একদফা দিচ্ছেন, কালকে তারা আরেকটি দফা দিয়ে বললেন, আপনি আওয়ামী লীগ করা বন্ধ করেন। এ দেশে কেউ আওয়ামী লীগ করতে পারবেন না। দুদিন পরে বলবে এ দেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে না। এদের একটার পর একটা দফা সারেন্ডার করে মেনে নেন, তাহলে আমরা যাব কোথায়। আমরা তো সংঘাত চাই না। আমি একটা প্রাণহানিরও পক্ষে না।

সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। অবশ্য এর মধ্যে গত ২০ আগস্ট কোটা সংস্কার আন্দোলন বা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন দাবি করে একই সঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকার বিষয়টি বোঝাতে পারেননি জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।

এসএম