ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সদ্য বদলি করা উপ-পরিচালক ডা. নূরুল ইসলাম ও সদ্য পদাবনতি হওয়া ওয়ার্ড মাস্টার আব্দুল আজিজকে শোকজ করা হয়েছে। ‘ঢাকা মেডিকেলে ওয়ার্ড মাস্টার বানানোর হিড়িক!’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত সংবাদে বক্তব্য দেওয়ায় তাদের শোকজ করা হয়।

গত ১৪ অক্টোবর ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তাদের শোকজের চিঠি দেন। এতে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়।

রোববার (২০ অক্টোবর) শোকজের পৃথক দুটি চিঠি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

শোকজ চিঠিতে ঢামেক পরিচালক উল্লেখ করেন, উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে আপনি ঢাকা পোস্টের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা ও অনুমতি ব্যতিরেকে হাসপাতাল প্রশাসন সম্পর্কে মিথ্যাচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রশাসনিক দায়িত্বশীল পদে থেকে আপনার এ ধরনের মিথ্যাচার ও উসকানিকমূলক কার্যকলাপ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আপনার এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকারি চাকরিবিধির পরিপন্থি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এ অবস্থায় আপনার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে না, তার কারণ পত্র জারির তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব নিম্ন স্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

গত ১৩ অক্টোবর ‘ঢাকা মেডিকেলে ওয়ার্ড মাস্টার বানানোর হিড়িক!’ শিরোনামে একটি একটি সংবাদ প্রচার করে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট। সেখানে হাসপাতালের উপ-পরিচালক এবং পদাবনতি হওয়া ওয়ার্ড মাস্টারের বক্তব্য ছাপা হয়। এর দুদিন পর উপ-পরিচালক ডা. মুহাম্মদ নূরুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল থেকে খুলনা মেডিকেলের উপ-পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। তার জায়গায় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও স্টোর) ডা. আশরাফুল আলমকে (প্রশাসন) (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি আদেশক্রমে ১৫ অক্টোবর সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবু রায়হান দোলন স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে বদলি করা হয়।

ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিককে কেন বক্তব্য দিয়েছেন তার জন্য পরিচালকের কক্ষে গত ১৪ অক্টোবর কয়েক দফায় জেরার মুখোমুখি হন ডা. মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। ওইদিনই তাকে শোকজের চিঠি দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে কয়েকজন কর্মচারী বলেন, ঢাকা পোস্টের সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনিক ব্লক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে প্রশাসনিক ব্লকে দফায় দফায় মিটিং চলে। বক্তব্য দেওয়ায় হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নুরুল ইসলামকে বদলি হয়েছে। সদ্য পদোন্নতি পাওয়া ডা. আশরাফুল আলম উপ-পরিচালক (প্রশাসন) হয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি হাসপাতালের অঘোষিত পরিচালক। হাসপাতালের পরিচালককে নিয়ে সম্প্রতি তিনি সুইজারল্যান্ড ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে গিয়েই তিনি এ পরিকল্পনা করেন। তার এমন ক্ষমতার উৎস নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। হাসপাতালে ডা. আশরাফুল আলমের কথাই শেষ কথা।

কর্মচারীরা আরও বলেন, তিনি তো এখন হাসপাতালের সেকেন্ড ইন কমান্ড হয়ে গেলেন। এখন যে তার কথার বাইরে যাবে তার অবস্থা খারাপ হবে। আপনার সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তার উপ-পরিচালক হওয়ার রাস্তা আরও মসৃণ হয়ে গেলো। শুরুতে হয়ত তিনি আপনার ওপর রেগে ছিলেন। কিন্তু পদোন্নতি পাওয়ার পর সেটা ভুলেই যাবেন। তবে ডা. নুরুল ইসলামের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। তিনি তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে চলেছেন বলেই আজ এ অবস্থা।

শোকজের বিষয়ে জানতে উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল ইসলাম ও পদাবনতি হওয়া ওয়ার্ড মাস্টার আব্দুল আজিজকে একাধিকবার কল করেও বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

এসএএ/এসএসএইচ