স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে গ্রেপ্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) জুয়েল রানা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলামকে চার দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছেন পুলিশ। সেই সঙ্গে আরেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) শাহেন শাহ্কে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন কাজের মেয়ে লিজাকে হত্যার অভিযোগে রমনা মডেল থানার মামলায় জুয়েল রানাকে, খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে বালুর ট্রাক রাখার ঘটনায় গুলশান থানায় মামলায় রফিকুল ইসলামকে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রমিজ উদ্দিন আহমেদ রুপ হত্যা মামলায় শাহেন শাহকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। 

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকালে পৃথক দুই মামলার শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালত জুয়েল রানা ও রফিকুলের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন মো. জুয়েল রানাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. পায়েল হোসেন। অন্যদিকে গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক রায়হানুল ইসলাম সৈকত আসামি রফিকুল ইসলামকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

অপরদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার শাহেন শাহকে আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে করা পুলিশের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার একটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন গত ১৮ জুলাই রমনা থানাধীন এলাকায় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এতে লিজাসহ অনেক সাধারণ মানুষ আহত হন। গুলিবিদ্ধ লিজা আক্তার গত ২২ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর লিজা আক্তারের বাবা মো. জয়নাল শিকদার বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৭৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে ২০১৩ সালে বালু ও ময়লার ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় গত ৪ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সদস্য মো. শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না করে ২০১৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রোসি কর্মসূচি দেওয়া হয়। কর্মসূচিতে যেন খালেদা জিয়া যেতে না পারেন সেজন্য তার বাসার সামনে বালু ও ময়লার ট্রাক দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নিষিদ্ধ পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করা হয়।

এছাড়া, গত ৪ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজার মেট্রোরেল স্টেশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন রমিজ (২৪)। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত ৭ সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা এ কে এম রকিবুল আহমেদ বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ ২২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এনআর/এসএমডব্লিউ