দেশের ব্যাংকগুলোকে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একইসঙ্গে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথাও বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টালে ব্র্যাক ব্যাংকের সাসটেইনেবলিটি রিপোর্ট ২০২৩ শিরোনামে ‘ব্লুম ইনটু দ্য ফিউচার’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, টেকসই এখন আর বিকল্প নয়, এটি একটি প্রয়োজনীয়তা। ব্যাংকগুলো টেকসই উন্নয়ন, সবুজ প্রবৃদ্ধি এবং জলবায়ু সহনশীলতায় আর্থিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ব্যাংকগুলোকে পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ না দেওয়ার আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, ‘ব্লুম ইনটু দা ফিউচার’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি ব্যাংকের টেকসই ব্যাংকিংয়ের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। যেখানে ব্যাংকের কার্বন নিঃসরণ কমানো, সবুজ অর্থায়ন সমর্থন এবং দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক অনুশীলন প্রচারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি ব্যাংকের জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে এবং বাংলাদেশের পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার কথা উল্লেখ করেছে।

পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও টেকসই কাঠামো গ্রহণ করার এবং একটি সবুজ ও সমতাভিত্তিক ভবিষ্যতের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।

নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংক পরিবেশ দূষণকারীদের বিনিয়োগ করছে

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংক পরিবেশ দূষণকারীদের বিনিয়োগ করছে। তবে ব্র‍্যাক ব্যাংক সেসব দূষণকারীদের বিনিয়োগ করছে না। যেসব কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পরিবেশ দূষণ করছে তাদের ব্যাংক ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। 

একইসঙ্গে পরিবেশ দূষণকারীদের ঋণ না দেওয়ার আহ্বানও জা‌নি‌য়ে‌ছেন তিনি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ব্র‍্যাক ব্যাংকের ওপর মানুষের একটি আস্থা রয়েছে। সেই আস্থা ব্র‍্যাক ব্যাংককে ধরে রাখতে হবে। উন্নয়ন হতে হবে টেকসই এবং সবুজ নির্ভর। আমাদের দেশে এই ধরনের টেকসই বিনিয়োগ যতটা না হয় তার চেয়ে বেশি শিল্প বিনিয়োগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন জাহাজ ভাঙা শিল্প প্রতিবছরই বড় হচ্ছে। কিন্তু এটি সবুজ শিল্পে রূপান্তরিত করা অসম্ভব। এটি একটি নদী ও সমুদ্র দূষণকারী শিল্প।

তাই দেশের সবুজ শিল্পায়ন বৃদ্ধিতে দূষণকারী শিল্পের বিনিয়োগ না করতে আহ্বান জানান উপদেষ্টা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহেরিয়ার এম হাসান, এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হুসাইন বক্তব্য রাখেন।

দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাসটেইনেবিলিটি বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশের সংস্কৃতির প্রসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে নূরুন নাহার বলেন, সাসটেইনেবিলিটি রেটিং শুধু একটি ব্যাংকের পারফর্ম্যান্সের পরিমাপকই নয় বরং তা দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাংকটির নেওয়া নানান উদ্যোগ। যা অর্থনৈতিক অগ্রগতি, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়গুলোও তুলে ধরে। বাংলাদেশ ব্যাংকে আমরা বিশ্বাস করি, একটি শক্তিশালী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ব্যাংকিং প্র্যাকটিসে টেকসইও নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহেরিয়ার এম. হাসান বলেন, আধুনিক ব্যাংকিং জগতে টেকসই এখন আর শুধু একটি পছন্দই নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়- উভয় ক্ষেত্রেই টেকসই ব্যাংকিং প্র্যাকটিসের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পেরে ব্র্যাক ব্যাংক গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আর্থিক খাতকে অবশ্যই মানুষ, পৃথিবী এবং দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির উদ্দেশ্য পূরণ করতে হবে। আমাদের এই রিপোর্টে সাসটেইনেবিলিটি বিষয়ে আমাদের ব্যাংকের উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিস রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের রিপোর্টটি মূল্যবোধ-ভিত্তিক, দায়িত্বশীল এবং টেকসই ব্যাংকিং প্র্যাকটিসের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। সামাজিক এবং পরিবেশগত বিষয় বিবেচনা করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসারে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের রিপোর্টের এই বছরের থিম ব্লুম ইনটু দ্য ফিউচার’ একটি সমৃদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, যেখানে টেকসই এবং আর্থিক সমৃদ্ধি পাশাপাশি অবস্থান করে। আমরা শুধু একটি ব্যাংক হিসেবেই বড় হচ্ছি না, বরং আমরা একটি বৃহৎ উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যতকেও নতুন রূপ দিচ্ছি।

অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, কর্পোরেট নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

আরএইচটি/এমএ