>> চিহ্নিত করা হয়েছে ৭৫ উপজেলা
>> বেকার ও দরিদ্ররা পাবেন সহায়তা
>> প্রকল্পের মেয়াদ হবে ৩ বছর
>> ব্যয় হবে ৮১৯ কোটি টাকা

দারিদ্র্য এবং অপুষ্টিতে ভুগছে এমন মানুষ বিবেচনায় দেশের ৭৫টি উপজেলা চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। এসব চিহ্নিত উপজেলার মানুষদের জন্য তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প প্রস্তাবনা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণে একটি বহুপক্ষীয় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের আয়োজনে এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে বন্যা দুর্গত এলাকায় ঘুরতে গিয়ে একটি বিশেষ বিষয়ে আমার দৃষ্টি পড়েছে। সেটি হচ্ছে বেকারত্ব এবং অপুষ্টি। বাংলাদেশের গ্রামে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার কিছু জায়গায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। যা আমরা আগে ভাবতেই পারিনি। অনেক ক্ষেত্রে এর পরিমাণ প্রায় ৫০ ভাগের বেশি। এত বেশি মানুষ বেকার থাকার কারণে পুষ্টিজনিত সমস্যা শিশু-নারী এবং দুর্বল মানুষদের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। আমার মনে হয় এই সমস্যাটিও দুর্যোগ হিসেবেই দেখা উচিত। এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করার জন্য আমার মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম।

তিনি আরও বলেন, তারা (মন্ত্রণালয়) একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। এতে ৭৫টি উপজেলা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে বেকারত্বের হার ৫০ ভাগ। তারা (বেকার ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী) বিভিন্নভাবে অপুষ্টির শিকার। এই উপজেলার মানুষেরা অপুষ্টি এবং বেকারত্বের কারণে দুর্যোগের মধ্যেও বেশি ঝুঁকিতে পড়েন। খাদ্য এবং জীবিকা সহায়তার মাধ্যমে অপুষ্টি মোকাবিলা করতেই এই কর্মসূচি দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করবে।

উপদেষ্টা বলেন, এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি পরিবারের জন্য মাসিক এক হাজার টাকার খাদ্য এবং দুই হাজার টাকা জীবিকা সহায়তার জন্য দেওয়া হবে। তিন বছর মেয়াদি (২০২৫-২০২৭ সাল) এই প্রকল্পে ৭৫টি উপজেলার ৭৫ হাজার পরিবার সহায়তা পাবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮১৯ কোটি টাকা। এই কর্মসূচিতে অর্থায়নের বিষয়ে দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাও অংশীদার হতে পারবে। মন্ত্রণালয় সে আলোকে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করবে।

এছাড়া সার্বিকভাবে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রকল্পের বিষয়ে দুর্যোগ উপদেষ্টা বলেন, দেশের মানুষকে এরকম আপন করে ভাবতে কখনো চেষ্টা করা হয়নি। সবসময়ই আমরা তাকিয়েছি  অবকাঠামো, রাস্তার উন্নয়নের দিকে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ পুষ্টিজনিত অভাবের কারণে তাদের চিন্তার সক্ষমতা হারাচ্ছে। 

সাম্প্রতিক সময় মন্ত্রণালয়ে কাজের গতি অনেক বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি আগের অবস্থায় আর নেই। আপনারা (এনজিও) যেসব কর্মসূচি এবং পরিকল্পনা ভেবে রেখেছেন সেগুলো এখন দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

বন্যা পরবর্তী জলাবদ্ধতা অতি দুশ্চিন্তার কারণ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, যেসব জায়গায় বন্যা পরবর্তী দীর্ঘ দিনেও পানি সরে না সেগুলোতে বিকল্প জীবিকার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সেটি বিবেচনায় আনতে হবে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কেরও ক্ষতি হচ্ছে। যারা খাল-নদী দখল করে পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে এগুলো দ্রুত অপসারণ করা হবে। মাঠ প্রশাসনকে সব চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। সমস্যাগুলোকে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদিভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। দুর্যোগগুলোর ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা যখন চাচ্ছি তখন এগুলো হবে।

উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করে বলেন, সময় আমাদের অনেক পরিবর্তন করে দিয়েছে। এটি শুভ লক্ষণ। দেশ নিয়ে নিজেদের মতো করে ভাবতে চেষ্টা করছি। আগে খণ্ডিতভাবে হয়ত আমাদের ভাবনা ছিল। এখন সামষ্টিক ভাবনার মধ্যে আমরা যাচ্ছি।

মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ডা. হোসেন জিল্লুর রহমান। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ সময় বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

আরএইচটি/এমজে