আলোচনা না করে যদি সরকারের নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত প্লাস্টিক সেক্টরকে ক্ষতির মুখে ফেলে তাহলে প্লাস্টিক খাতের ব্যবসায়ীদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।  

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আজ (সোমবার)  প্লাস্টিক ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। তারা প্রয়োজনে সময়ও চেয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে। 

গত ২০ জুন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ১৭টি সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য ফেইজ আউট করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায়। প্রথম অবস্থায় সুপারশপগুলোতে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আগামী ১ নভেম্বর থেকে সারা দেশে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে সরকার, যার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তার কোনোটা নিয়েই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে না। হুট করেই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা করে অন্তত ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় দিয়ে যদি এটা করা হয় তাহলে বিষয়টা ভালো হবে এবং ব্যবসায়ীরাও সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। 

বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব বলেন, বারবার গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, বাড়ির মালিকদের ভাড়া বাড়ানো, আগের সরকারের সময়ের চাঁদাবাজি, সরকারের দ্বিমুখী সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায়ীরা এমনিতেই ভালো অবস্থায় নেই। এর মধ্যে যদি ব্যবসার ওপর নতুন আঘাত আসে তাহলে সরকারের ট্যাক্স কমে যাবে, ইন্ডাস্ট্রি নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়বে, বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতি অনেক নাজুক, প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা কিন্তু পথে নেমে যাবে।

লিখিত বক্তব্যে প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং প্লাস্টিক ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক সামিম আহমেদ বলেন, যে লক্ষ্যে ২০২২ সালে প্ল্যাস্টিক শপিং ব্যাগ বন্ধ করা হয় তা গত ২২ বছরে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য শপিং ব্যাগের বিকল্প উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হয়নি। পরিবেশ বাঁচাতে হলে রিসাইকেল, রিইউজের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে।

প্লাস্টিকের দূষণ কমানো সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, সমুদ্র দূষণের জন্য আমরা দায়ী না। ভারত, নেপাল, চীন থেকে ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়, প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে আসে। এটা আমাদের নদ, নদী ও সমুদ্রে বর্জ্য সৃষ্টি করেছে। সুতরাং সব বর্জ্যের জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করা যুক্তিসংগত নয়।

প্লাস্টিকের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধীরে তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী আয়োডাইজড লবণ প্লাস্টিক ছাড়া মোড়কীকরণ সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার ভোজ্য তেলের সাথে ভিটামিন এ যুক্ত করতে চায়, যা প্লাস্টিক কনটেইনার ছাড়া সম্ভব নয়। তরল দুধ প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া বাজারজাত সম্ভব নয়। এ ছাড়া গাছের চারা, টেক্সটাইল ও জুট প্যাকেজিংসহ নানান কাজে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক দরকার।

তিনি আরও বলেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে। সরকারের এই প্রচেষ্টার ফলে প্লাস্টিক সেক্টরের ব্যবসা বাণিজ্য এবং লিংকেজ হিসেবে অন্যান্য সেক্টরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই আইনের কারণে শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিন্তা করেন। সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি না সেটাও চিন্তা করেন। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের তালিকায় এমন কিছু পণ্য আছে যার সঙ্গে জড়িত আছে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান।  এই খাতের সঙ্গে ১৩ লাখ ক্ষুদ্র বিক্রেতা জড়িত৷ সরকারের কোষাগারে প্রতিবছর ৪০ হাজার কোটি টাকা জমা হয়। 

বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব বলেন,  এর আগে যখন প্লাস্টিক বন্ধ হলো তখন এই খাতের অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে গিয়েছিল। ২০০২ সালে পাটকে উৎসাহিত করতে শপিং ব্যাগ বন্ধ করা হলো। কিন্তু দেখা গেল আদমজী মিলস বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলি বিকল্প এলে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ হয়ে যাবে।

এমএইচএন/এনএফ