বাংলাদেশ রেলওয়ের পোর্টার পদে মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার পরও গত সাত বছরে ফল প্রকাশ করা হয়নি। তাই ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষার্থীদের পক্ষে এ দাবি জানান মো. সাইফ ইবনে সাফা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৯১ জন পোর্টার নিয়োগের জন্য ১৯৮৫ এর নিয়োগবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষার ফি বাবদ ৫০ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। দেশের ৬৪টি জেলা থেকে চাকরিপ্রার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যোগ্যপ্রার্থী হিসেবে আমাদের সরবরাহ করা তথ্য যাচাই-বাছাই করে, আবেদন সঠিক বলে জানানো হয়। পরে নিয়োগ সংক্রান্ত মৌখিক পরীক্ষা নির্দিষ্ট তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অজানা কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৯১ জন পোর্টার নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ করেনি। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল কিংবা স্থগিত সংক্রান্ত কোনো মতামত প্রকাশ করেনি।

মো. সাইফ ইবনে সাফা বলেন, আমরা অনেকদিন অপেক্ষা করার পর ৯১ জন পোর্টার নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করি। কিন্তু কোনো জবাব না দিলে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়ে মামলা করি। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ও সিলেকশন বোর্ডের বিরুদ্ধে রুল জারি করে আদেশ দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এর জবাব দেয়নি এবং দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা জেনেছি কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের নিজস্ব সৃষ্ট কোম্পানি দিয়ে পরিচালিত আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে অদক্ষ দলীয় (আওয়ামী লীগ) লোক নিয়োগ দিয়েছেন। এর ফলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ৪০০ জন পোর্টার নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে। বর্তমানে প্রায় ২০০ জন আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে অদক্ষ দলীয় (আওয়ামী লীগ) লোক পাকশি, লালমনিরহাট ও রাজশাহী বিভিন্ন স্টেশনে পোর্টার পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন।

এই চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি পোর্টার নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ২০১৮ সালে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সাবেক সচিব ও মন্ত্রীর সঙ্গে সিলেকশন কমিটির মতবিরোধ-দ্বন্দ্বের কারণে তা ব্যাহত হয়। অথচ ২০১৭ সালের পত্রিকা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও সিলেকশন বোর্ড নিয়োগ সংক্রান্ত সব পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও গত সাত বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখন অবধি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বাংলাদেশ রেলওয়ে। এদিকে ৩০ বছর পার হয়ে গেছে বেশির ভাগ চাকরিপ্রত্যাশীর।

তিনি বলেন, পোর্টার পোস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল পোস্ট যা স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি পোস্ট। এমনকি স্টেশন মাস্টারের আদেশ সঠিকভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পোর্টারে পদটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৫০২টি রেল স্টেশনে ৫০২ জন পোর্টার থাকতেই হবে। বিশেষ করে রেল লাইন ক্লিয়ার করা, পরবর্তী ট্রেন কোন লাইনে থাকবে এসব কিছুর টোকেন বহনকারী এই পোর্টাররা এর গুরুত্ব অনুধাবন করে, পোর্টার নিয়োগের জন্য রেল প্রশাসনের জোর সুপারিশ আছে। তারপরও কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এসব স্থানে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে অদক্ষ লোক নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের যথেষ্ট ক্ষতি সাধন করছে। কারণ এটি একটি টেকনিক্যাল পোস্ট। বাংলাদেশ রেলওয়েতে দক্ষ পোর্টারের অভাবে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তা বিষয়টি অন্য দিকে মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে।

সাফা দাবি জানিয়ে বলেন, ২০১৭ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশ রেলওয়ে ৯১ জন পোর্টার নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ এবং হয়রানির শিকার হওয়া চাকরি প্রার্থীদের অনতিবিলম্বে নিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

এমএইচএন/এসএসএইচ