ছয় মামলায় জামিন পাওয়া সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ‘খুন ও গুমের শিকার শহীদ পরিবার’। 

বুধবার (৯ অক্টোবর) প্রেস ক্লাবের সামনে ‘খুন ও গুমের শিকার শহীদ পরিবার’-এর ব্যানারে এর আয়োজন করা হয়।  

গত রোববার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় চারটি ও পল্টন থানায় দুইটি মামলা ছিল। এর মধ্যে খিলগাঁও থানায় দুটি হত্যা ও দুটি হত্যাচেষ্টা মামলা ছিল। আর পল্টন থানায় একটি হত্যা ও একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছিল। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত খিলগাঁও থানার মামলায় তার জামিনের আদেশ দেন। আর পল্টন থানার দুই মামলার আদেশ দেন বিচারক জিয়াদুর রহমান।

জামিন পাওয়ার পর প্রসিকিউশনের আসাদুল ইসলাম বলেছিলেন, সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আর মামলা না থাকায় তার জামিনে কোনো বাধা নেই। 

পরে একই দিন সন্ধ্যায় মুক্তি পান সাবের হোসেন। কিন্তু সাবেক এই মন্ত্রীর জামিনের পর তার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করছেন ‘শহীদ’ পরিবারের সদস্যরা। 

তারা বলেন, আমরা সাবের হোসেন চৌধুরীর ফাঁসি দেখতে চাই। এজন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বলতে চাই যে, সাবের হোসেনকে আবার গ্রেপ্তার করা হোক। তাহলে আমরা ভাববো যে আপনারা নিরপেক্ষ সরকার। 

খিলগাঁও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনির বাবা ইয়াকুব আলী বলেন, আমার ছেলে কী অপরাধ করছিল যে তাকে মেরে ফেলতে হলো? আমার ছেলে রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন করতো এটা উনার (সাবের হোসেন চৌধুরী) সহ্য হয়নি। এজন্য আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলের হত্যাকারী (সাবের হোসেন চৌধুরী) পাঁচ দিনের রিমান্ড থাকার পরও কীভাবে কারামুক্ত হয়ে যায়? আমার সন্তানের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি রাজপথে থাকব। 

তিনি বলেন, আমি এই সরকারের কাছে জানতে চাই, আপনারা কার নির্দেশে চলছেন?  আমরা জানতে চাই কীভাবে সে কারামুক্ত হয়ে গেল? আপনারা যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন আমরা ভেবেছিলাম আমরা বিচার পাব। কিন্তু আপনারা এটা কোন বিচার করলেন? আমরা চাই আবার তার কারাদণ্ড দেওয়া হোক। তার ফাঁসি কার্যকর করা হোক। 

সমাজকর্মী ইউনুস মৃধা বলেন, আমরা আশা ও স্বপ্ন নিয়ে এই সরকারের সমর্থন দিয়েছি, কিন্তু সাবের হোসেন চৌধুরীকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা দিয়ে জামিন দেওয়া হলো। একটি স্বাধীন দেশে এটা কীভাবে সম্ভব? আমাদের বহু নেতা ও ছাত্রনেতাকে তিনি হত্যা করেছেন। আর কত মানুষ হত্যা হলে সাবের হোসেন চৌধুরীকে খুনি হিসেবে গণ্য করা হবে?  

তিনি বলেন, আমরা ১৭ বছর গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি, আইনের শাসনের জন্য রক্ত দিয়েছি। আজকেই আইনের যে অবস্থা এটা কীসের আলামত?  এই সাবের হোসেন চৌধুরীকে জামিন দেওয়ার মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীসের ইঙ্গিত দিতে চাচ্ছে?  

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের কাছে জানতে চাই, যে হাত আজকে এতো রক্তে রঞ্জিত, সে কীভাবে জেল থেকে বের হয়ে আসে? কীভাবে ৬/৭টা হত্যার আসামিকে একদিনের মধ্যে জামিন দেওয়া হয়? এটা কী আমরা মেনে নিতে পারি? এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। 

মাসুদ আহমেদ মিলন নামের এক বিএনপি কর্মী বলেন, খুনের মামলার আসামি যদি দুই দিনে বের হয়ে যায়, তাহলে বাকি খুনিরাও একই রেফারেন্স দেবে। তিন খুনের আসামিকে আপনারা কীভাবে মুক্ত করে দিলেন? আপনারা সাবের হোসেনকে ভদ্রলোক ভাববেন না। আপনারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। না হলে আমরা ১৬ বছর আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি। এখনো চালিয়ে যাব। আপনাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করতে বাধ্য হবো। 

উল্লেখ্য, সাবের হোসেন চৌধুরী সর্বশেষ সংসদে রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। পালন করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

ওএফএ/কেএ