সম্প্রতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য ফাঁস হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এবং বিতর্কিত দুই যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযমের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য সামনে এসেছে।

এ অবস্থায় ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট ৬৫ কর্মকর্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেছেন এক আইনজীবী।

রোববার (৬ অক্টোবর) নাদিম মাহমুদ নামের হাইকোর্টের আইনজীবী দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর ওই আবেদন করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে নাদিম মাহমুদ বলেন, ডিসিদের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি তথ্য ফাঁস হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুদক থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমি তাই দুদকে আবেদন করেছি। একই সঙ্গে যারা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দের অনুরোধ করেছি। কারণ ফাঁস হওয়া তথ্যানুসারে ঘুষের টাকা ডলার ও টাকায় লেনদেন হয়েছে। পরিবারের সদস্যসহ তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে দুদক যদি পদক্ষেপ না নেয় তাহলে হাইকোর্টে রিট করতে হবে।

আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমি একজন বাংলাদেশের স্থায়ী ও সচেতন নাগরিক এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে ঘুষের মাধ্যমে অর্থাৎ দুর্নীতির মাধ্যমে পদে নিয়োগ সমর্থন করি না বিধায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি ও পদায়ন করা জন্য চেক, ক্যাশ ও ডলারে ঘুষের টাকা লেনদেন করা এবং ঘুষের টাকা বিদেশে পাচার কর ও ঘুষ লেনদেন এ সহায়তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করা একান্ত প্রয়োজন।  দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কেউ যাতে বিদেশে পালাতে না পারে এবং তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি।

অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করা এবং অভিযুক্তদের কেউ যাতে বিদেশে পালাতে না পারে সেজন্য আদালতে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও অনুরোধ করা হয়েছে আবেদনে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে ফাঁস হয়েছে এক ভয়াবহ কেলেঙ্কারির তথ্য। এ নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এবং বিতর্কিত দুই যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযমের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য সামনে এসেছে। সেই সিনিয়র সচিবের সঙ্গে এক যুগ্ম সচিবের হোয়াটসঅ্যাপের কথোপকথনে সম্প্রতি ডিসি নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের তথ্যও উঠে এসেছে।

গত ৩ অক্টোবর দেশের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপের কথোপকথনের একপর্যায়ে নিজেকে নির্লোভ দাবি করেন সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান। টাকা-পয়সার প্রতি কোনো লোভ নেই জানিয়ে ডিসি নিয়োগে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন তিনি। তাদের এ সংক্রান্ত কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশট রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহলেও ঘুরপাক খাচ্ছে, যা নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে ব্যাপক তোলপাড় চলছে।

আরএম/জেডএস