ধর্মের বোন বানিয়ে ছেলেকে অপহরণ করেন বাদল, উদ্ধার করল র্যাব
এক নারীকে ধর্মের বোন বানিয়ে তারই ৮ বছরের সন্তান তুষারকে অপহরণ করে পালিয়ে যান হৃদয় (ছদ্মনাম) নামের এক যুবক। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যৌথ অভিযান চালিয়ে অপহৃত আব্দুল্লাহ আল নূর তুষারকে উদ্ধার করে র্যাব। যদিও অভিযানে হৃদয়কে (আসল নাম বাদল) গ্রেপ্তার করা যায়নি।
র্যাব জানায়, হৃদয় (বাদল) নামের ৩০ বছর বয়সী এক যুবকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় এক নারীর। এক পর্যায়ে ওই নারীকে ধর্মের বোন বানান সেই যুবক। একে অপরের সঙ্গে দেখাও করেন একাধিকার। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৮ বছরের সন্তান তুষারকে নিয়ে রাজধানীর সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করতে যান সেই নারী। পরে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তুষারকে অপহরণ করেন হৃদয়।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস।
শনিবার রাতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যৌথ অভিযান চালিয়ে অপহৃত আব্দুল্লাহ আল নূর তুষারকে উদ্ধার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব ২ ও ৮)।
আরও পড়ুন
মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, অপহরণকারী হৃদয়ের আসল নাম বাদল। তিনি ছদ্মনামে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করেন। এতে তার স্ত্রীও তাকে সহযোগিতা করেন। এলাকায় তাদের অনেক দেনা রয়েছে। তাই প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন তারা। যদিও অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি র্যাব।
তুষারকে অপহরণ সম্পর্কে মুনীম ফেরদৌস বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় আব্দুল্লাহ আল নূর তুষার (৮) নামের এক শিশু অপহরণের শিকার হয়। ভিকটিমের মায়ের সঙ্গে অপহরণকারী বাদল ওরফে হৃদয় (৩০) নামের এক তরুণের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে ঘটনার দিন ভিকটিমকে নিয়ে ভিকটিমের মা সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় বাদল ওরফে হৃদয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরবর্তী সময়ে অপহরণকারী বাদল তুষারকে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে অপহরণ করে।
তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগীর মা সদরঘাটের সোয়ারীঘাট ও এর আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় সন্তানকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে ২ অক্টোবর ভিকটিমের বাবা বাদি হয়ে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। গত ২ অক্টোবর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ভিকটিমের মাকে ফোন করে মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা দাবি করেন। মুক্তিপণের টাকা না দিলে তুষারকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি। ভিকটিমের পরিবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারীদের ৬ হাজার টাকা প্রদান করেন।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, অপহরণকারী বাদল ওরফে হৃদয় মুক্তিপণ আদায় করতে তুষারকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। পরে তুষারের বাবা র্যাব-২ এর কাছে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের জন্য লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে অপহৃত তুষারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৫ অক্টোবর) রাতে র্যাব-২ ও ৮ এর যৌথ আভিযানিক দল সুপরিকল্পিতভাবে অপহৃত ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তুষারকে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানাধীন আমড়াগাছি হোগলপাতি নামক প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করে। তবে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যান।
এই অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক। পাশাপাশি অপহৃত তুষারকে তার অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি।
এমএসি/পিএইচ