কোটা বৈষম্যের জন্য সংরক্ষিত ৬৭২টি শূন্য ক্যাডার পদে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের থেকে মেধার ভিত্তিতে নির্বাহী আদেশে সুপারিশ করার দাবি জানিয়েছে ৩৪তম বিসিএস কোটা বৈষম্যের শিকার ক্যাডার বঞ্চিত ফোরাম।

শনিবার (৫ অক্টোবর) সেগুনবাগিচা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটর (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

আয়োজকরা বলেন, আমরা ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ক্যাডার বঞ্চিত প্রার্থী। আমরা সরাসরি কোটা বৈষম্যের শিকার। পিএসসি কর্তৃক গত ২০১৩ সালে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে আমরা ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। বিজ্ঞপ্তির আলোকে অংশগ্রহণ করে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। গত ২০১৫ সালে ৩৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল পিএসসি কর্তৃক প্রকাশিত হয়। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ সব ধাপে কৃতকার্য ৮ হাজার ৭৬৩ জন প্রার্থী থেকে পিএসসি ২ হাজার ১৫৯ জনকে বিভিন্ন ক্যাডার পদে সুপারিশ করে। অবশিষ্ট ৬ হাজার ৫৮৪ জন প্রার্থী কৃতকার্য হওয়ার পরেও ক্যাডার পদে সুপারিশ করা হয়নি। অথচ ৩৫টি ক্যাডার পদে কোটার জন্য ৬৭২টি পদ সংরক্ষণপূর্বক শূন্য রাখা হয়। এই পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন জানাচ্ছি।

তারা বলেন, ৩৪তম বিসিএসের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এবং চূড়ান্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বিসিএস সাধারণ ক্যাডার পদে ৫টি, প্রফেশনাল, টেকনিক্যাল ক্যাডার পদে ১১১টি (সহকারী সার্জন ৭৪, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৩, ভেটেরিনারি সার্জন ১৪টি), সাধারণ শিক্ষা (প্রভাষক, বিভিন্ন বিষয়ে) ক্যাডারে ২৮৮টি সহ প্রায় ৩৫টি ক্যাডার পদে ৬৭২টি পদ শূন্য রাখা হয়। ৩৪তম বিসিএসের পূর্বের ৩৩তম এবং পরবর্তী ৩৫তম, ৩৬তম এবং ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে কোনো ধরনের কোটা সংরক্ষণ করা হয়নি এবং কোটার শূন্য পদে উত্তীর্ণ প্রার্থী থেকে মেধা অনুযায়ী পূরণ করা হয়। তাই ৩৪তম বিসিএস-এ ক্যাডারে কোটা সংরক্ষণ করা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক। এর প্রেক্ষিতে আমরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, পিএসসির চেয়ারম্যান, জনপ্রশাসন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্মারকলিপি প্রদান করি এবং মাঠ পর্যায়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলমান রাখি।

আমাদের আন্দোলনের ফলে গত ২০১৬ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ৩৪তম বিসিএসের প্রাধিকার কোটায় সংরক্ষণ নীতি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু ৬৭২ টি শূন্য পদ ৩৫তম থেকে পূরণের আদেশ দেওয়া হয়। যা সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক, অমানবিক, বৈষম্যমূলক এবং তৎকালীন সরকারের স্বৈরাচারী চিন্তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন। অথচ, ৬৭২টি শূন্য ক্যাডার পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রার্থী মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ রয়েছে। তাই আমরা এই বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক আদেশটি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।

ক্যাডার বঞ্চিত ফোরামের সদস্যরা বলেন, আমরা ৩৪তম বিসিএস-এর কোটা বৈষম্যের শিকার প্রার্থীরাই ২০১৩ ও ২০১৫ সালে শাহবাগে প্রথম এই কোটা বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্রভাবে সংগঠিত হয়। এ আন্দোলনের মূলভিত্তি ছিল, কোটা প্রথার বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে তা ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। বর্তমান সরকার বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ।

দাবির কথা জানিয়ে তারা বলেন, নির্বাহী আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক আদেশটি বাতিল করতে হবে। সেই সঙ্গে নির্বাহী আদেশে ৩৪তম বিসিএসে কোটার জন্য সংরক্ষিত ৬৭২টি শূন্য ক্যাডার পদে বৈষম্যের শিকার উত্তীর্ণ প্রার্থীদের থেকে মেধার ভিত্তিতে সুপারিশ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৩৪তম বিসিএস কোটা বৈষম্যের শিকার ক্যাডার বঞ্চিত ফোরামের আহ্বায়ক ডা. মো. তফিজুল ইসলাম,  সদস্য জামিলুর রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ।

এএসএস/এমএ