ভারত-আমেরিকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। তারা ‘আদিবাসী’ প্রচারণা ও ‘উপজাতি সন্ত্রাসবাদ’ উসকে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। তারই অংশ হিসেবে পাহাড়ে জাতিগত সংঘাত সৃষ্টি করতে একদল হিংস্র উপজাতি সন্ত্রাসী স্কুলশিক্ষক সোহেল রানাকে নির্মমভাবে শহীদ করেছে।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সোহেল রানা হত্যার বিচার ও দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখতে ৭ দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাবি শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে শিক্ষার্থী, সামাজিক সংগঠনের সদস্য, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতেই এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এতে ভারত-আমেরিকা মদদ দিচ্ছে। ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ‘আদিবাসী’ প্রচারণা ও ‘উপজাতি সন্ত্রাসবাদ’ উসকে দেওয়া হচ্ছে। হিংস্র উপজাতিরা স্কুলশিক্ষক সোহেল রানাকে হত্যা করেছে। তারা জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চায়।

সংগঠনটির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষার্থে ৭ দফা দাবি তুলে ধরে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।

সমাবেশে মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন- বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারত উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে। তাছাড়া সম্প্রতি ভারত থেকে প্রকাশ্যে বাংলাদেশের পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি আসছে।

তিনি আরও বলেন, এই একই কাজ যদি ভারতের সেভেন সিস্টার্সের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ করে তখন কিন্তু ভারতও শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না। ভারতের সেভেন সিস্টার্স বা চিকেন নেকের কণ্ঠ চেপে ধরার অনেক উপাদানই বাংলাদেশের নাগালে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা পছন্দ করে না। একইভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে (ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) আমেরিকার স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশ যদি এখানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে মার্কিন স্বার্থের বিপরীত ব্লকে চলে যায় তাহলে কিন্তু আমেরিকা এই অঞ্চলে সুবিধা করতে পারবে না। ঘুড়ির নাটাই শুধু ভারত কিংবা আমেরিকার হাতেই নেই বরং বাংলাদেশের হাতেও রয়েছে।

সমাবেশে হিল হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট মিনহাজ ত্বকি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বাঙালি শিক্ষকদেরকে বের করে দেওয়ার জন্য একটা ট্রামকার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। সেটি হলো ধর্ষণ নাটক। সোহেল রানা হত্যাও এর ব্যতিক্রম নয়। এভাবে পাহাড়ে সেনাবাহিনীকে ক্রিমিনাল আর বাঙালিদের সেটেলার হিসেবে পরিচিত করানো হচ্ছে। আসলে পাহাড়ে উপজাতি ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না তারা এটাই বলতে চায়। আমি বলব, সাবধান হয়ে যাও, না হয় তোমাদের ট্রাম্পকার্ড তোমাদের গায়ে গিয়ে পড়তে পারে।

সমাবেশে সংগঠনটির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে —

১. বাংলাদেশের উপজাতিদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অখণ্ডতাবিরোধী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ ও ‘জুম্ম’ শব্দ ব্যবহার এবং বাংলাদেশের বাঙালিদের সম্বোধনে ‘সেটেলার’ শব্দ ব্যবহারকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। ব্যক্তি, এনজিও, মিশনারি, গণমাধ্যম কিংবা প্রতিষ্ঠান যারাই উপরিউক্ত শব্দ ব্যবহার করবে তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার বিদেশে ওসব শব্দ ব্যবহার করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে শক্তভাবে তার প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

২. অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও সংবিধানবিরোধী জাতিগত বৈষম্যমূলক প্রচলিত আইন, চুক্তি ও বিধিসমূহ সংস্কার করে দেশের সকলের জন্য এক সংবিধান ও এক আইন প্রণয়ন ও জারি করতে হবে। সংবিধান সংস্কারে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট আইন, চুক্তি ও বিধি সংস্কার, সংশোধন কিংবা নতুন আইন, বিধিমালা প্রণয়নে সরকারকে অবশ্যই স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির সুপারিশ, পরামর্শ ও প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।

৩. উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক পাহাড়ের বাঙালি মুসলমান নিধনের জাতিগত ধারাবাহিক কিলিং মিশনের শিকার স্কুলশিক্ষক সোহেল রানা হত্যার সঙ্গে জড়িত ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। পার্বত্য সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি চাকরিতে উপজাতি কোটা বাতিল করতে হবে।

৫. ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে প্রবেশ করিয়ে বাংলাদেশকে ভারত-আমেরিকা বনাম চীন দ্বন্দ্বের প্রক্সি স্টেট বা বলির পাঠা বানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আরও বেশি অস্থিতিশীলতা ও ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া যাবে না। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।

৬. পার্বত্য অঞ্চলে চলমান অস্থিতিশীলতা নিরসন, সন্ত্রাস দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা ক্যাম্প বাড়াতে হবে।

৭. ১৯৯৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী উপজাতি কর্তৃক সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ না করায় সংবিধানবিরোধী পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বাতিল করতে হবে।

আরএইচটি/এমজেইউ