বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের নেতারা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী বিরোধী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করছেন এখন সেই নেতারাই।  

সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের এই নেতারা আওয়ামী লীগের আমলে মন্ত্রীদের পাশে থেকে করেছেন নানান অপকর্ম। কর্মচারী হয়েও এদের কেউ কেউ বনে গেছেন কোটিপতি। অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য ও বদলির হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের পর সেই খোলস বদলেছেন তারা। আওয়ামী বিরোধী নেতাদের অতিথি করে সভা-সমাবেশ ডেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুনজর পেতে তৎপর হচ্ছেন।   

৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ ব্যানারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেখানে অতিথি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নাম। 
অথচ এই সংগঠনের পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করা কর্মচারীরা। আওয়ামী আমলে এই দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের নেতারাই মূলত কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনে ছিলেন। 

বিভাগীয় সমাবেশটি করতে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়াম বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এম আব্দুল বাতেন বিপ্লব। এই সংগঠনটি ১৭ জুলাই ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিবৃতি দিয়েছিল। সেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমালোচনা করা হয়। 

এতে বলা হয়, চীন সফরোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কোটা প্রসঙ্গে বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা কোটা পাবে না তো রাজাকারের নাতি-পুতিরা কোটা পাবে? কথাটি বলার মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন। কিন্তু সে বক্তব্য ঘিরে নেতিবাচক প্রচারণা ফেডারেশনের কাছে উদ্দেশ্যমূলক ও দূরভিসন্ধিমূলক মনে হয়েছে। দেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলনে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। সেই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাঙ্গণ থেকে রাজাকারের সমর্থনে স্লোগান ওঠা পুরো জাতিকে হতাশ ও বিস্মিত করেছে, যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। 

কর্মচারীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের আমলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের নাম দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন মো. ওয়ারেস আলী। তিনি সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা অফিসার ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি (একাংশ)। এই দলে আছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খায়ের আহমেদ মজুমদার, চট্টগ্রামের পরিবার পরিকল্পনায় কর্মরত ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি দবির উদ্দিন এবং বিআইডব্লিউটিএতে কর্মরত আবদুল বাতেন বিপ্লব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের এক কর্মচারী বলেন, ওয়ারেছ আলী ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। তার আয়ের উৎস কী? আওয়ামী লীগ আমলে তারা এসব করেছে। রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে অনিয়ম দুর্নীতি করে অঢেল টাকা বানিয়েছেন। তাদের দোসরেরা সারা দেশে আছে। তারাই এখন নাম বদল করে সভা সমাবেশ করছে। সেখানে আওয়ামী বিরোধী জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। চট্টগ্রামেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সাধারণ কর্মচারীরা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এম আব্দুল বাতেন বিপ্লব বলেন, আমাদের দাবি আদায়ের জন্য সমাবেশ করছি। একজন গার্মেন্টস কর্মীর বেতন স্কেল ১২ হাজার ৫০০ টাকা, অথচ আমাদের ৮ হাজার ২০০ টাকা। কতটা মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় একবার ভেবে দেখুন। এখানে কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।

ছাত্র আন্দোলনে দেওয়া বিবৃতির প্রসঙ্গে বলেন, সেটি সংগঠনের বিবৃতি নয়, তারা (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) নিজেদের বিবৃতি দিয়েছিল। ব্যক্তির কোনো অপরাধের দায় সংগঠন নেবে না।

আরএমএন/এনএফ