বাংলাদেশের পাট, বস্ত্র ও জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগে ইউরোপ-বাংলাদেশ ফেডারেশন অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ (ইবিএফসিআই) দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

বুধবার (২ অক্টোবর) সচিবালয়ে ইউরোপ-বাংলাদেশ ফেডারেশন অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইবিএফসিআই) ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান। 

নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র -জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। যে বাংলাদেশ স্বপ্ন ও অপার সম্ভাবনার। যে বাংলাদেশ হবে দুর্নীতি ও হয়রানি মুক্ত। যে বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি প্রতিটি বিনিয়োগই হবে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। আমি ইবিএফসিআইসহ দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারীদের সম্ভাবনাময় এই নতুন বাংলাদেশের পাট, বস্ত্র ও জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, গত ১৫ বছরের দুঃশাসনে দেশের অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় পাট ও বস্ত্র শিল্পকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থে পাট ও বস্ত্র কলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘুষ, অনিয়ম, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে যায় গোটা দেশ। 

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে ইবিএফসিআইয়ের ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামোসহ অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় আমরা বাংলাদেশে পাট, বস্ত্র ও জাহাজ শিল্পে অর্থ লগ্নি করতে আগ্রহী। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা এবং পাট পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করায় উপদেষ্টাকে তারা ধন্যবাদ জানান। 

বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার “রিসার্চ সেন্টার অন জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল” স্থাপন বিষয়ে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রিসার্চ সেন্টার স্থাপন বিষয়েও প্রবাসীরা সরকারকে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা করতে পারে। 

পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ অক্টোবর থেকে দেশের সকল সুপারশপে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাটের অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

উপদেষ্টা জানান, বর্তমান সরকার অত্যন্ত বিনিয়োগবান্ধব। সরকার যেকোনো সেক্টরে বৈদেশিক বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার কাজ করছে। রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে সহজ বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাঠামোগত ও আইনগত সংস্কার করা হবে।

এ সময় ব্যবসায় প্রতিনিধি দল বিভিন্ন বন্দরে মালামাল খালাসে জটিলতার বিষয়ে উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, কোথাও কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। বন্দর কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো দুর্নীতি-অনিয়ম হলে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের বিষয়ে আশ্বস্ত করে উপদেষ্টা বলেন, পাট, বস্ত্র ও জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ করা হলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করা হবে। মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তর সংস্থায় কোনোরূপ কোনো অনিয়ম ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির সুযোগ থাকবে না। দুর্নীতি ও অনিয়মের কোনো অভিযোগ আসলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইবিএফসিআইয়ের ২৬ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী সংগঠনটির সভাপতি ড. ওয়ালি তছার উদ্দিন উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার সুদক্ষ কর্মতৎপরতায় বাংলাদেশের বস্ত্র ও পাট এবং জাহাজ শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পারে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

বৈঠকে বস্ত্র ও পাট সচিব মো. আব্দুর রউফ, নৌপরিবহন সচিব ড. এ কে এম মতিউর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমএসআই/কেএ