অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ সংসদ সদস্যসহ ২০ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।

বুধবার (২ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো: আকতারুল ইসলাম  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু- নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, নেত্রকোনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার, কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ জাহের, ময়মনসিংহ-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, নীলফামারীর-১ এর সাবেক সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার, চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, রাজশাহী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা এবং রাঙ্গামাটি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার।

এছাড়া নোয়াখালীর কবিরহাট পৌরসভার সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল হক রায়হান, কবিরহাটের সাবেক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলি, ৩ নং ধানসিড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল কন্ডাক্টর, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিন বিএসসি, নোয়াখালী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ও ২নং সুন্দলগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন রুমি।

অন্যদিকে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বর, সহ-সভাপতি বৃষকেতু চাকমা, অংসিপ্রু চৌধুরী এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক রেমলিয়ানা পাংখোয়া এর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, সাবেক হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাবেক এমপি সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৪০ শতাংশ বেশি প্রাক্কলন তৈরি করে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, মাদক চোরাকারবারিদের নিকট হতে কমিশন গ্রহণ, তার এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলের উপর অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় দুদক। 

রাজশাহী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, মাদক চোরাকারবারিকে নিকট হতে কমিশন গ্রহণসহ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছে দুদক।

নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। 

ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় পদসহ নিয়ে বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আফতার উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।

রাঙ্গামাটির সাবেক সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে শত কোটি টাকা লোপাট, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইফতেখার উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

ময়মনসিংহ-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ জাহেরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, গ্যাস চুরিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ-বিদেশে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া জামালপুর-শেরপুরের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে আমেরিকায় বাড়ি ক্রয়সহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছে দুদক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুদক প্রায় ৩০০ জনের তালিকা ধরে এগোচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতা থাকাকালীন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও ওই সরকারের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানে জোর দিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে দুদক থেকে গত দুই মাসে সেই সরকারের শতাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত এসেছে।

আরএম/পিএইচ