ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেছেন, আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে যে, মামলায় যারা প্রকৃত অর্থে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে অযথা হয়রানি করা হবে না।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএমপির ৫০ থানায় এখন অনেক মামলা হচ্ছে। দেখা গেছে এক ব্যক্তির নামে আট থেকে ১০ থানায় মামলা। আসলে এসব অভিযোগের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তি জড়িত কিনা, বিষয়টি পুলিশ কীভাবে তদন্ত করছে? এ প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাগুলো আমরা গ্রহণ করছি। প্রতিটি মামলার একটি তদন্ত প্রক্রিয়া রয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে কাউকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসি। এখন যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা একাধিক থানায় থাকে, তাহলে অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক্ষেত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য বিশ্লেষণ করে কারো যদি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তখনই তাকে গ্রেপ্তারের আওতায় আনা হয়। কাউকে অযথা হয়রানি বা ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

রাজধানীতে বেশ কিছু অপ্রীতকর ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে হত্যা ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বেড়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কাজের প্রক্রিয়া দুই ধরনের। একটি হলো প্রিভেন্টিং পুলিশিং, আরেকটি হলো ডিটেকটিভ পুলিশিং। আমাদের চেষ্টা থাকে সমাজ থেকে অপরাধকে যতটুক পারা যায় মিনিমাইজ করে রাখা। এক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু কৌশলও রয়েছে,‌ কৌশলগুলো আমরা প্রয়োগ করছি। ঢাকা শহরে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। এক্ষেত্রে কিছু ঘটনা ঘটতে পারে এবং অনেক সময় ঘটে যায়। সেই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমাদের কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশিংয়ের একটি ব্যবস্থা রয়েছে। যখন একটা ঘটনা ঘটে, ঘটনার কারণ কী এবং অপরাধীদের চিন্তা কী, এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে আমরা অভিযুক্তদের‌ আইনের আওতায় নিয়ে‌ আসি।

এসব মামলার অনেক অভিযুক্ত অভিযোগ করে বলেছেন যে, স্পটে এমনকি দেশে না থেকেও এসব মামলায় তাদের নাম আসছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা বিভিন্ন থানায় দায়ের হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশ কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, কেউ মামলার আসামি হলেই যে আমরা অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করছি, সেটি কিন্তু না। সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করি। এক্ষেত্রে কারো যদি সংশ্লিষ্টতা তা না থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

অনেক মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে মামলার বাদীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিসি মিডিয়া বলেন, মামলার ক্ষেত্রে মিথ্যা অভিযোগ করলে বাদীর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিন্তু আইন আছে। যে কেউ মনগড়া একটা অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত এবং বিশ্লেষণ ছাড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করছি না। সেক্ষেত্রে বাদীদের আমরা বলব যে, তারা যেন বস্তুনিষ্ঠ অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসে।

অনেক মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে বারবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হচ্ছে। এসব মামলার তদন্ত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে পুলিশ কতটুকু আশাবাদী? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হতেই পারে। দেখার বিষয় হচ্ছে যে, নতুন তদন্ত করে কর্মকর্তা মামলাটা কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। আমাদের যারা তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা অবশ্যই এ বিষয়ে অবগত আছেন। এতে তদন্ত কাজ বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলবে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থাগ্রহণ করব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার হত্যা মামলার তদন্তে পুলিশ এখন পর্যন্ত কতটুকু এগিয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমাদের তদন্তের বিষয়েও আমরা কাজ করছি। আশা করি এই ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের দ্রুত আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব। ঘটনার প্রকৃত কারণ ও রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হব।

যে হলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, সেই হলের প্রভোস্টের কোনো গাফিলতি আছে কিনা বা তাকে আইনের আওতায় আনা হবে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্ত যদি আরো কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

কাকরাইলে অডিট ভবনের সামনে পুলিশ সদস্যরা তাদের সিনিয়র অফিসারদের কমান্ড মানেননি। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল, এরপর কিন্তু আমরা পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। আর এ বিষয়ে আমার আরও জানতে হবে।

৫ আগস্ট অনেক পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। এ বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে কোনো মামলা করেছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ফৌজদারি মামলা কখনো তামাদি হয় না। যেহেতু এসব বিষয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম চলছে, সেহেতু কেউ ফৌজদারি অপরাধ করা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

এমএসি/কেএ