প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে ব্যর্থ হওয়া, কলেজ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি করে মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করায় ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন রাজধানীর বেসরকারি আইচি মেডিকেল কলেজের ১৫০ শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের জন্য স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর অনাপত্তিপত্র দিলেও মাইগ্রেশন ঠেকাতে নানা তালবাহানা শুরু করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা দ্রুত মাইগ্রেশন চালুর দাবি জানান।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান জানান, তারা চলতি বছরের জুন মাস থেকে সব ধরনের শিক্ষাকার্যক্রম বর্জন করে আসছেন। তাতেও মালিক পক্ষের কোনো সাড়া না পাওয়ায় আগস্ট মাসে কলেজের অনুমোদনের ব্যাপারে তারা উদাসীন কেন জানতে চান। তারা নিজেদের ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরলে আইচি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের অনুমোদনের ব্যাপারে ২৮ আগস্ট অপারগতা প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীদের অন্য কলেজের মাইগ্রেশনে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলেও জানায়।

পরে মন্ত্রণালয় থেকে মাইগ্রেশনের জন্য তাদের কাছে বিভিন্ন ডকুমেন্ট চাইলে তারা যথাসময়ে তা জমা দিয়েছেন। কিন্তু অতি সম্প্রতি কলেজ কর্তৃপক্ষ আবার উদাসীনতা শুরু করেছে। গুটিকয়েক শিক্ষক বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মাইগ্রেশনকামী শিক্ষার্থীদের কলেজে রাখার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী ইফ্ফাত জাহান বলেন, ২০১৭ সালে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনা ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১১ (সংশোধিত) এর বাস্তবায়নের জন্য কলেজটিকে কিছু শর্তারোপ করা হয়। এটি পালনে ব্যর্থ হওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আইচি মেডিকেল কলেজকে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস কোর্সে কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে মন্ত্রণালয়ের জারি করা সাময়িক ভর্তি স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। কিন্তু ওই ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত হননি।

মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তার কারণে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে উল্লেখ করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের নিশ্চিত ভবিষ্যতের আশায় অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশন দিতে কোনো আপত্তি নেই বলে অনাপত্তিপত্রও জারি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অসদুপায় অবলম্বন করছে। মাইগ্রেশন সংক্রান্ত কাজের জন্য বিভিন্ন ডকুমেন্টস চাইলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ বা গড়িমসি করছে। ফলে মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ায় প্রচণ্ড কালক্ষেপণ হচ্ছে। তাছাড়া হোস্টেলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ছাড়াতে বিভিন্ন ফন্দি করছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমাদের শিক্ষাজীবনের অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেছে। মানহীন কোনো মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে মানুষের জীবন নিয়ে খেলার ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমাদের ভবিষ্যতে ভালো মানের ডাক্তার হওয়ার জন্য নিয়মিত অধ্যয়ন করা জরুরি। এ অবস্থায় আমাদের দ্রুত মাইগ্রেশন না করলে অনেক শিক্ষার্থীর অকালে ঝরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এজন্য স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে দ্রুত মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করার আহ্বান জানান তারা।

ওএফএ/এসএসএইচ