বাবুল আক্তার | ফাইল ছবি

পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে। বুধবার (১২ মে) সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করার কথা রয়েছে। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হবে তাকে।

পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানায়, বাবুল আক্তারকেই মামলার প্রধান আসামি করা হবে। মামলার এজাহারে তাকে স্ত্রী হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হবে। আগের মামলার আসামিদেরকে নতুন মামলায় হত্যাকাণ্ডের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হবে। 

সূত্র জানায়, বাবুল কেন তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে জানতে আজ (বুধবার) তাকে আদালতে তোলা হবে। আদালতে সোপর্দ করে তাকে রিমান্ড বা জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হতে পারে। 

আরও পড়ুন : মামলার বাদী থেকে যেভাবে সন্দেহের তালিকায় বাবুল আক্তার

বুধবার (১২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানায়, আজই বাবুল আক্তার বাদী হয়ে মিতু হত্যা মামলায় যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন তার চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করবে পিবিআই। এরপর পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা দায়ের হবে সে মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জানাবে। 

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার মিতু হত্যা মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআইতে ডাকা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই স্ত্রী হত্যায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্তকারী দল। তাই তাকে পিবিআই হেফাজতে রাখা  হয়েছে। মামলার তদন্তের বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। কিছুদিন পর বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন মিতু হত্যাকাণ্ডের জন্য জামাতা বাবুল আক্তারকে দায়ী করেন। দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম।

আলোচিত ওই হত্যা মামলা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা নাটকীয়তা তৈরি হয়। বাবুল আক্তারকে পুলিশ সুপারের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাবুল আক্তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বলে তখন শোনা গিয়েছিল। অনেক দিন এ বিষয়ে আর কথা বলেনি কোনো পক্ষ। পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর বাবুল আক্তার প্রথমে কিছুদিন রাজধানীর আদ্বদীন হাসপাতালে চাকরি করেন। পরে তিনি নিজে একটি ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন বলে জানা যায়।

প্রথম দিকে মামলাটি ডিবি তদন্ত করলেও ২০২০ সাল থেকে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। বহুল আলোচিত এ মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। 

কেএম/এইচকে