ফাইল ছবি

নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে সরকার। এসব কমিশনের বাইরে আরও কমিশন গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে সরকার গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে প্রথমবারের মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সংস্কার কমিশন গঠনের কারণ সম্পর্কে মাহফুজ আলম বলেন, দেশের মানুষ দীর্ঘসময় ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট ছিল। এখন জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি যেমন আছে। তেমনিভাবে নির্বাচনের আগে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারের দায়িত্ব আছে। সেটা হচ্ছে দেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো গত ১৫ বছরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো জনগণের স্বার্থে কাজ করতে পারছে না, সেগুলোকে ঢেলে সাজানো। প্রাথমিকভাবে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবে। কমিশনগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করবে। তাদের ওপর কোনো রকম রাজনৈতিক চাপ না থাকে, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

ছয়টি ছাড়াও আরও সংস্কার কমিশন গঠনের ইঙ্গিত দেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, পরবর্তীতে আরও সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব টেবিলে আছে। সময় করে সেগুলো গঠিত হবে।   

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রিয়াজ ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বৈঠকে, বাকী পাঁচজন সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আজকের সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক ছিল। সেখানে প্রধানত সংস্কার ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশনগুলো কীভাবে কাজ করতে চায়, কর্মপদ্ধতি কী হবে, সদস্য বাছাইয়ের প্রক্রিয়া কী হবে, কবে প্রতিবেদন দেবেন; সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা পেশাজীবী সংগঠন আছে, তাদের অংশগ্রহণ কীভাবে হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে কিছু বিষয়ে সবাই ঐকমত্য হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, কমিশনগুলো ১ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরু করবেন। আশা করছি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্বিতীয় ধাপে উপদেষ্টামণ্ডলী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। এরপর আরও বৃহৎ আকারে আলোচনা হবে, সমাজের সব স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

আসিফ নজরুল বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে সেগুলো অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সকলের মতামতের প্রতিফলন করার চেষ্টা করা হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা শুধু নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সেটা ছিল একটা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন।

অতীতে নানা ধরনের সংস্কার কমিশন হয়েছিল কিন্তু সেটা ফলপ্রসূ হয়নি, এবারেরটা হবে কিনা— এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আমরা এ কমিশনগুলোতে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করব। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করব। অতীতের কমিশনগুলো ঠিক এইভাবে আলাপ করে নাই। আমরা জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যাতে পরবর্তীকালে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার আসবে সেও মালিকানা অনুভব করে এবং এটা কনটিনিউ করে। বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সকলকে সহযাত্রী করার জন্য আমরা আলোচনা শুরু করব।

অতীতের কমিশনের রিপোর্টগুলোও বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে। সেখানে যদি কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামি থাকেন, উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা যায় হোন না কেন, ওনার প্রত্যর্পণ আমরা চাইতে পারি।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা একটা কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে ছিলাম। বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হয়েছি। ভোটাধিকার থেকে শুরু করে বহুক্ষেত্রে বঞ্চনা। এটার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে এজন্য কতগুলো পরিবর্তন আনতে হবে। কতগুলো সংস্কার করতে হবে। আমাদের প্রতিবেদনে উপদেষ্টা পরিষদ কী আশা করছে, সেটা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।   

সংস্কারের পর প্রক্রিয়াগতভাবে দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করার কোন উদ্যোগ নেবেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, প্রক্রিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যক্তির দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, আরও বেশি দায়িত্বশীল করার অনেক সুযোগ আছে। আমরা সারাজীবন সংস্কার নিয়ে কাজ করেছি, কিছু দিন আগের আমি সিভিল সোসাইটির অংশ ছিলাম। আমাদের এখানে যারা আছেন তাদের অনেকের চিন্তাভাবনা আছে এসব ব্যাপারে। 

সংস্কার করতে কতদিন সময় লাগতে পারে— এমন প্রশ্নে আসিফ নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আরও সংস্কার কমিশন আছে সেগুলো এই সংস্কার কমিশনের জন্য অপেক্ষা করবে না। প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসার পরপরই হয়ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় শাসনসহ বিভিন্ন কমিশন কাজ শুরু করবে।

তিনি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের ভিত্তিতে কিছু কিছু প্রস্তাব থাকবে, সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে করতে পারব। কিছু কিছু প্রস্তাব থাকবে মধ্যমেয়াদি, কিছু কিছু থাকবে দীর্ঘমেয়াদি। কিছু প্রস্তাব হয়ত আগামী নির্বাচনে বিজয়ী সরকারের জন্য থাকবে। আমরা চূড়ান্ত প্রস্তাব না পাওয়ায় কিছু ক্লিয়ারলি (পরিষ্কার) বলতে পারছি না।

এনএম/এমজে