বাঁ থেকে মাহফুজুর রহমান মিতা, নাছিমুল আলম চৌধুরী ও জহুরুল ইসলাম চাকলাদার ওরফে রেন্টু / ফাইল ছবি

ক্ষমতার অপব্যবহার, নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা ও কুমিল্লা-৮ আসনের সাবেক এমপি নাছিমুল আলম চৌধুরী (নজরুল) এবং যশোরের সাবেক মেয়র জহুরুল ইসলাম চাকলাদার ওরফে রেন্টু চাকলাদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর কমিশন থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মাহফুজুর রহমান মিতা

চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনবার এমপি ছিলেন। দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ছিল ৪৭ লাখ ৫ হাজার ৮০৫ টাকা। গত ১০ বছরে তার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৪ টাকা। যা ২০১৪ সালের বার্ষিক আয়ের তুলনায় ১০১.২ শতাংশ বেশি এবং অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৯৯.২৩ শতাংশের বেশি। স্ত্রী মাহমুদা মাহফুজের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৯০ শতাংশের বেশি।

দুদকের অনুসন্ধানে তাদের নামে পূর্বাচলে প্লট, মতিঝিলে ৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত বিল্ডিং, গুলশানে ফ্ল্যাট, উত্তরায় দিয়াবাড়িতে ৫ কাঠা জমির প্লট, হারামিয়া সন্দ্বীপে জমি বাড়ি এবং মাহফুজুর রহমান মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যুক্তরাষ্টসহ বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে জানা গেছে।

তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

সাবেক এমপি নাছিমুল আলম চৌধুরী

কুমিল্লা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরীর (নজরুল) বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তথ্যানুসন্ধানকালে তার নিজ নামে বিজে জিও টেক্সটাইল লি. নামের কোম্পানিতে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ: ঢাকার বনানী ডিওএইচএস ও নিকুঞ্জে ২টি ফ্ল্যাট; কুমিল্লার বরুড়া বাজারে প্রায় ১৭টি দোকান; কুমিল্লা সদরে ঠাকুরবাড়ি ও ঝাউতলায় ২টি বহুতল বাড়ি; এছাড়া নামে-বেনামে প্রায় ৪৫০ শতাংশ জমির মালিকানা রয়েছে বলে জানা গেছে। অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বর্হিভূত সম্পদের গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যাওয়ায় কমিশন থেকে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

মেয়র রেন্টু চাকলাদার

যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র জহুরুল ইসলাম চাকলাদার ওরফে রেন্টু চাকলাদার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে যশোর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে নিজের বা পৈত্রিকভাবে উল্লেখ করার মতো সম্পদ ছিল না। কিন্তু মেয়র হওয়ার পর তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

২০১৮ সালে একই সময়ে শহরে ৭২টি রাস্তাঘাট নির্মাণ ও শহরে বাতি স্থাপনে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। তিনি শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম করে প্রায় ৪০ একর জমি আত্মসাত করেছেন। যশোর শহরের আরাবপুর এলাকায় প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর বিশাল বাগান বাড়ি, যশোর শহরের রূপদিয়া বাজার এলাকায় ২০ বিঘা জমির ওপর একটি ফিড মিল, শহরের কাজিপাড়ায় সুদৃশ্য অট্টলিকা নির্মাণ করেছেন। তিনি যশোরের বাঘারপাড়ার একাধিক স্কুল-কলেজের সভাপতি হওয়ায় নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে গোপনীয় সোর্স মূলে জানা যায়।

এছাড়া গোয়েন্দা অনুসন্ধানকালে জানা যায়, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

আরএম/এসএম