কিছুটা সহজলভ্য হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষের কাছে পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছ চাহিদার শীর্ষে। কিন্তু এসব মাছে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে। যা মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমিন রুমি আলিম। 

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ড. শারমিন রুমি আলিম বলেন, ‘আমাদের সাধারণ মানুষের তথা নিম্নআয়ের মানুষের অন্যতম পছন্দের খাবার পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছ। এখন এই মাছে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাত্রা এত বেশি যে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। এক রোগের ওষুধ খেলে অন্যান্য রোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, ‘দেশে ৭০ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। আর ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু রয়েছে ৪ নম্বরে। এগুলো আমাদের খাদ্যভাসের ওপর নির্ভর করে। এজন্য আমাদের গবেষণার মাত্রা বাড়াতে হবে। আমাদের গবেষকদের গবেষণা করার জন্য এক বছর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময় বাড়ানো দরকার।’

বিএফএসএর সাবেক পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে বাজারে ১৩টি কোম্পানির দুধের মধ্যে ১১টিতে হেভি মেটাল পাওয়া গিয়েছিল। যার মামলা এখনো চলছে। আবার স্বনামধন্য কম্পানির হলুদের মধ্যে ক্ষতিকর লেড পাওয়া গিয়েছিল। আমেরিকায় পাঠানোর পর তারা জানিয়েছিল। এগুলো নিয়ে বিএফএসএ কাজ করার ফলে আগের চেয়ে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। স্ট্রিট ফুডগুলোতে নানা ধরনের রং ব্যবহার করে খাবারকে আকর্ষণ করে তোলা হয়। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এখন ১০টি গবেষণায় অর্থায়ন করা হচ্ছে। আশাকরি দেশের নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থায় তৈরিতে বড় অবদান রাখবে।’

পথিকৃৎ ইনস্টিটিউট অব হেলথ স্টাডিজের চিফ রিচার্স অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডের দোকান বেশি। শিক্ষার্থীদের ২৫ শতাংশ ফাস্ট ফুড খায়। তারমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের খাবার বেশি খায়। এসব তৈলাক্ত খাবারে জিহ্বায় আলাদা স্বাদ জমে। তাতে করে এসব খাবারের প্রতি তারা বেশি আকর্ষিত হয়। তখন অন্য খাবার ভালো লাগে না। কিন্তু এতে তারা মোটা হয়ে যাচ্ছে। শারীরিক গঠন সঠিকভাবে হচ্ছে না।’

অনুষ্ঠানে গবেষণার সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজি ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, নোয়াখালী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু বিন হাসান সুসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিচার্স সায়েন্সের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট ড. এস কে আরিফুল হক, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জিমান মাহমুদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক ড. মাহফুজা মোবারক।

জেডএস