ছাত্র-জনতার আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রামে ১৪ পুলিশের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা হয়েছে। 

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনের আদালতে মামলাটি করা হয়। 

ভুক্তভোগী নাজমুল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীর বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। আদালত এটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করে তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম নগর পুলিশ দক্ষিণ জোনের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাফিজুর রহমান, কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) অতনু চক্রবর্তী, কোতোয়ালি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়েদুল হক, বাকলিয়া থানার সাবেক ওসি আফতাব উদ্দিন, কোতোয়ালি থানার পেট্রোল ইন্সপেক্টর (ট্রাফিক) মো. মিজানুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মেহেদী হাসান, গৌতম, আবদুস সালাম ও মো. মিজান, এএসআই রুবেল মজুমদার ও রণেশ বড়ুয়া, কনস্টেবল শাহজাহান, কামাল, এবং মো. ইলিয়াছ। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৭ জন পুলিশ সদস্য। 

মহানগর দায়রা জজ আদালতের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালত ভুক্তভোগীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা রুজু করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়। পরে পুলিশ ছাত্রদের ওপর অতর্কিতভাবে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং রাবার রবুলেট ছোঁড়ে। 

এসময় ঘটনাস্থল থেকে সুস্থ অবস্থায় নাজমুলকে আটক করে শারিরীক আঘাত করতে করতে পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ সদস্যরা লোহার স্টিক, বক্সে থাকা স্ট্যাম্প দিয়ে ভুক্তভোগীকে বেধড়কভাবে সারা শরীরে শিবির বলে পেটাতে থাকে। 

পরে নাজমুলকে পুলিশের একটি গাড়িতে করে প্রথমে চান্দগাঁও এবং আধঘণ্টা পর কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনজন এসআই ও একজন কনস্টেবল ‘শিবির আনা হয়েছে’ এবং ‘আন্দোলন করো মজা বুঝবে’ বলে উল্লাস করে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। পরে থানার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে ‘মজা কি এখনই বুঝবে’ বলে উল্লাস করে নাজমুলের দুই হাত ওপরে তুলে দেওয়ালমুখী করে দাঁড় করিয়ে কাঠের স্ট্যাম্প এবং লাঠি দিয়ে পিঠ, কোমর ও দুই পায়ের উরুতে মারধর করে। 

ওইসময় কোতোয়ালি জোনের এসি অতনু চক্রবর্তী এবং থানার সাবেক ওসি ওবায়েদুল হক ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে চেক করতে থাকে। ওসি মোবাইল ফোনে কিছু না পেয়ে নাজমুলকে শিবির করে কি না জিজ্ঞাসা করে।

তিনি না সূচক জবাব দিলে বুকে লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দুটি কাঠের স্ট্যাম্প দিয়ে নাজমুলের দুই হাতের দুই বাহুর ওপর রেখে ওই স্ট্যাম্পের উপর দুই জন করে দুই পাশে দাঁড়ায়। এসময় এসি ও ওসি তাকে শিবিরকর্মী বলে স্বীকার করে নিতে জোর করে। একপর্যায়ে ওই ভুক্তভোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। 

এরপর তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু মেডিকেলে না নিয়ে তাকে আবারও কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়। ওইদিন বিকেলে বাকলিয়া থানার টহল পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

এদিকে, নাজমুলের বড় ভাই নজরুল খবর পেয়ে বাকলিয়া থানায় যায়। এসময় ওসির বডিগার্ড কনস্টেবল মো. ইলিয়াছ তাকে বাকলিয়া থানার দ্বিতীয় তলায় দেখে থানায় কেন ঘুরাঘুরি করতেছে জানতে চায়। তখন সে ছোট ভাইয়ের খোঁজে এসেছে বলায় ওই কনস্টেবল উত্তেজিত হয়ে চিৎকার ও চেঁচামেচি করতে থাকে এবং বলে, ‘এই শা.. (ভিকটিম) একটা শিবির, শা.. আন্দোলনে যোগ দিছে। ওকে মেডিকেলে নেওয়ার আগে এইখানেই গুলি করে মেরে ফেলব।’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি দৌড়ে থানার হাজত খানায় গিয়ে শটগান ভুক্তভোগীর দিকে তাক করে গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। 

রাত ১১টার দিকে কলেজছাত্র নাজমুলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা করানো হয়। পরে ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন নাজমুলকে ৮ নম্বর আসামি করে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। যে মামলায় ১৪ দিন কারাগারে থাকার পর আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেয়।

এমআর/এমএসএ