সময়াবদ্ধ সংস্কার পরিকল্পনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ১৩টি প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর এনআইডি ব্যবস্থাপনা ও নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ক সংস্কারের পরিকল্পনা করছে ইসি। ইতোমধ্যে সংস্থাটির সচিব শফিউল আজিম এ সংস্কারের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছেন।

ইসির এই ১৩ প্রস্তাবের মধ্যে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্ট এনআইডি কার্ডকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও নাগরিকের তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ই-কেওয়াইসি (ইলেকট্রনিক্যালি নো ইয়োর কাস্টমার) সিস্টেম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি।

ইসির পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে ১৮০টির বেশি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের এনআইডি ডাটা সেন্টারের ডাটা কানেক্টিভিটির মাধ্যমে জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার থেকে তথ্য যাচাই সেবা গ্রহণ করছে। এ ধরনের যাচাই সেবা গ্রহণের জন্য জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারে কানেক্ট না হয়ে অফলাইনে স্মার্ট কার্ডের চিপসে রক্ষিত তথ্য রিড করে এবং একইসঙ্গে স্মার্ট কার্ড বহনকারী নাগরিকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করে নাগরিককে যাচাই করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি/বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানে নাগরিকদের সেবা প্রদানে সেবা গ্রহীতার তথ্য পূরণের প্রয়োজন হয় সেসব প্রতিষ্ঠানে electronically e-KYC (Know Your Customer) এর প্রচলন করা যেতে পারে। সরকারি অফিসে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হলে স্মার্ট কার্ডে তাদের তথ্য সংরক্ষণ করা ও স্মার্ট কার্ডকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ট্রাভেল ডকুমেন্টস হিসেবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য এনআইডি মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের সেবার প্রচলন করতে হলে সব নাগরিককে স্মার্ট এনআইডি কার্ড সরবরাহ করতে হবে। আর ইসির সার্ভার থেকে তথ্য যাচাই করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ই-কেওয়াইসি সিস্টেমের আসতে হবে। ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণ উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে আগে তৎকালীন এনআইডি মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলন করে ওই বছর আগস্টে বলেছিলেন, স্মার্ট এনআইডি কার্ডে তিন স্তরে মোট ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথম স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো খালি চোখে দেখা যাবে। দ্বিতীয় স্তরেরগুলো দেখতে হলে যন্ত্রের লাগবে। আর তৃতীয় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেখতে ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক পরীক্ষা লাগবে। এই কার্ড থেকে মোট ২২ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে– আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, চাকরির আবেদন, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, ব্যাংক হিসাব খোলা ও ঋণ প্রাপ্তি, সরকারি ভাতা উত্তোলন, ভর্তুকি, সাহায্য ও সহায়তা প্রাপ্তি ইত্যাদি। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিমানবন্দরে আগমন-বহির্গমন সুবিধা, শেয়ার আবেদন ও বিও অ্যাকাউন্ট খোলা, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বিবাহ-তালাক রেজিস্ট্রেশন, পরিষেবার সংযোগ, ই-টিকিটিং, সিকিউরড ওয়েব লগ ইন ও নির্ভুল তথ্য সঠিকভাবে সংযোগ ইত্যাদি সেবা। তবে এসব এখনও এই কার্ডের মধ্যে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ইসি সচিব জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বিশেষ সভায় জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সহজিকরণ ও নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে কিছু স্বল্পমেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটা পরিকল্পনা মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছি।

এসআর/এসএসএইচ