আগামী অর্থবছর থেকে তামাকজাত দ্রব্যের বিদ্যমান অ্যাড ভেলোরেম পদ্ধতির পরিবর্তে, সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)।

মঙ্গলবার (১১ মে) অনলাইনে সংগঠন দুটি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়। সভা থেকে ২০২১-২২ অর্থ-বছরের জন্য পাঁচ দফা কর প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়।

প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা; প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য নিম্ন স্তরে ৫০ টাকা, মধ্যম স্তরে ৭০ টাকা, উচ্চ স্তরে ১১০ টাকা ও প্রিমিয়াম স্তরে ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে যথাক্রমে ৩২ দশমিক ৫০ টাকা, ৪৫ দশমিক ৫০ টাকা, ৭১ দশমিক ৫০ টাকা, এবং ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; ফিল্টারবিহীন বিড়ির ২৫ শলাকার খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে যথাক্রমে ১১ দশমিক ২৫ টাকা এবং ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। 

এছাড়াও রয়েছে, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ই-সিগারেটের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা। পাঁচ দফা কর প্রস্তাব ছাড়াও সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আগের মতো বহাল থাকার সুপারিশ করা হয়েছে।

সভায় বক্তারা বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে প্রচলিত অ্যাড ভেলোরেম পদ্ধতিটি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। ফলে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়লেও তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে না, তামাক কোম্পানির মুনাফা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭৬ ভাগ দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কোন না কোনোভাবে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির করারোপ ব্যবস্থা বিদ্যমান। বিশ্বের ১১৫টি দেশে ইউনিফর্মড কর ব্যবস্থা চালু রয়েছে। অর্থাৎ এসব দেশে সব সিগারেট এক দামে কিনতে হয়, কোন মূল্য স্তর নেই। 

তারা বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কেবলমাত্র বাংলাদেশে স্তরভিত্তিক অ্যাড ভেলোরেম পদ্ধতিতে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপ করা হয়। বাংলাদেশের প্রচলিত ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ এর ধারা ১৫(৩) ও ৫৮ অনুযায়ী সব ধরনের তামাকজাত পণ্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা সম্ভব। তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা হলে করের পরিমাণ নির্ণয় ও কর আদায় করা সহজ হবে, সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের মূল্য বাড়বে, রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কমবে।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আবদুল্লাহ। এছাড়া আরও সংযুক্ত ছিলেন বাটার সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপির কনভেনর ড. রুমানা হক ও বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিখিল ভদ্র ও এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা।

এমএইচএন/আরএইচ