দেশে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির গ্রাহকের বিপরীতে টাওয়ার সংখ্যা কম থাকার কারণে নেটওয়ার্কের জটিলতা, ধীরগতি এবং কলড্রপের পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এখনও ৬০ শতাংশ টাওয়ার নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে। এর বিপরীতে কয়েকটি টাওয়ার কোম্পানি বিনিয়োগে সক্ষমতা তৈরি করলেও বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘মোবাইল নেটওয়ার্কের মানোন্নয়নে টাওয়ার স্বল্পতা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, টাওয়ার স্বল্পতা নিরসনে মোবাইল অপারেটর, টাওয়ারকো এবং ভেন্ডরদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। কারণ বর্তমানে নেটওয়ার্কের ধীরগতি, কল ড্রপ, কল মিউটসহ মোবাইল নেটওয়ার্কের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মূল কারণ হচ্ছে টাওয়ার স্বল্পতা।

বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশে সক্রিয় সিমের সংখ্যা ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার। ট্রাফিক তথা টেলি ডেনসিটি অনুযায়ী প্রতি বর্গ কিলোমিটার জোরে অন্ততপক্ষে একটি অপারেটরে একটি টাওয়ার থাকার কথা। সে অনুযায়ী দেশের চারটি অপারেটরের টাওয়ারের পরিমাণ হওয়ার কথা প্রায় ২ লাখ। কিন্তু টাওয়ার শেয়ারিং ও নেটওয়ার্ক শেয়ারিং এর কারণে টাওয়ারের প্রয়োজন বর্তমানে ন্যূনতম পক্ষে ১ লাখ। কিন্তু জুলাই ২০২৪ এর বিটিআরসি সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট টাওয়ার সংখ্যা রয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার ৫ ৭৪টি। অর্থাৎ মোট চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ টাওয়ার রয়েছে।

বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাওয়ারকো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের সহযোগী ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান সমস্যা দ্রুত নিরসন করতে না পারলে আগামীতে নেটওয়ার্ক তৈরিতে শুধু নয় নেটওয়ার্কে একটি বিপর্যয় আসতে পারে। আমাদের দেশে অপ্রতুল জমি, এবং মানুষের মধ্যে রেডিয়েশন নিয়ে ভুল ধারণা থাকার কারণে বিগত সরকার ২০১৮ সালে চারটি কোম্পানিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার অবকাঠামো ভাগাভাগি সংক্রান্ত টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দিয়েছে।

টাওয়ারের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর টাওয়ার সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বর্তমানে জিপির টাওয়ারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫২৬টি, রবির ২ হাজার ২৭৬টি, বাংলালিংকের ৪ হাজার ৬টি, টেলিটকের ৩ হাজার ৩২০টি, ইডটকো লিমিটেডের ১৬ হাজার ৭৩২, সামিটের ৪ হাজার ৫৪৯টি, কীর্তনখোলার ৭৩৫টি, ফ্রন্টিয়ারের ১১৬টি, এবং বিটিসিএলের টাওয়ার রয়েছে মাত্র ৫১৪ টি।

‘আমরা চলতি বছরের ২৩ মে একটি প্রতিবেদনে বলেছিলাম মানহীন বিটিএস (বেস ট্রান্স সিভার স্টেশন) দিয়ে চলছে দেশের অধিকাংশ এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা। আমরা দেশের সীমান্ত এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এর টেকনাফ ও উখিয়া এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং বিটিএসের মান পর্যবেক্ষণ করি। এখানে আমরা দেখতে পাই, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথেই নেটওয়ার্ক থাকে না। এমনকি সামান্য বৃষ্টিপাতেও নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা দেখেছি, টেলিটক, বিটিসিএলের টাওয়ারের ব্যাটারির মেয়াদ এবং ইউপিএস মান অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আবার পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি থাকা এই এলাকাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্কের সেবা নিয়ে মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিটিএসে ব্যবহৃত মাইক্রোওয়েভের মানও অনেকটা নিম্নমানের। আবার টাওয়ারগুলোর সাথে ফাইবার কানেক্টিভিটির অপূর্ণতাও রয়েছেই।

সীমান্ত এলাকায় নেটওয়ার্ক বর্ডার ক্রস আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের অপারেটররা টাওয়ার তৈরি করতে পারছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ঠিকই টাওয়ার নির্মাণ করছে। এ ব্যাপারে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করে সমস্যা নিরসনে কাজ করতে পারে।

এ সময় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, বিইআরসির সাবেক সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের, গ্রামীণ ফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর ও কর্পোরেটর অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত, রবি আজিয়াটার চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ব্যারিস্টার সাহেদুল আলম, বাংলালিংক লিমিটেডের চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স তৈমুর আলম, সামিট টাওয়ার্স লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স আদনান শাহরিয়ার, কীর্তনখোলা টাওয়ার্স লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার এহতেশাম খান, ইডটকো হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের অ্যাসোসিয়েটস ডিরেক্টর মাসুদা হোসাইন, ফ্রন্টিয়ার লিমিটেডের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স মো. তাজনীন আলম, বিডিজবসের ফাউন্ডার ফাহিম মাশরুর, সোলার ইলেক্ট্রো বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ডি. এম. মুজিবুর রহমান ও ফ্রন্টিয়ার কনট্রাক্টরর্স ফোরামের প্রতিনিধিরা।

আরএইচটি/এমএ