ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় আটক হওয়া সাংবাদিক নেতা মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তকে ঢাকায় দায়ের হওয়া পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টার দিকে ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ও পোড়াকান্দুলিয়া সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকা থেকে স্থানীয়রা দুই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে আটক করেন। এরপর তাদের ধোবাউড়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। এসময় আরও দুজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন– একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার জেমসন মাহবুব ও প্রাইভেটকার চালক সেলিম।

সাংবাদিক নেতাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটিও স্থানীয়রা জব্দ করেন বলে জানান ধোবাউড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. চাঁন মিয়া।

ওসি বলেন, প্রাইভেটকারে করে সীমান্তের দিকে যাওয়ার পথে স্থানীয়রা তাদের আটক করেন। তারা সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। তাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শ্যামল দত্ত দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। মোজাম্মেল বাবু একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড-এর সভাপতি

জানতে চাইলে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো. আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। সেখানে পৃথক থানায় দায়ের করা মামলার আসামি মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত। সেখান থেকে অফিসিয়ালি জানানোর পর তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকায় পাঠানো হবে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘সাংবাদিকতার আড়ালে জাতীয় স্বার্থ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা’র অভিযোগে যে ৫১ জন সাংবাদিককে কর্মস্থল থেকে বহিষ্কার এবং সাংবাদিক অঙ্গনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা, সেখানে মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তের নাম ছিল।

ছাত্রদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন একটি বিবৃতি দিয়েছিল মোজাম্মেল বাবুর নেতৃত্বাধীন এডিটরস গিল্ড। শ্যামল দত্তও ওই সংগঠনের সদস্য।

গত ১৬ জুলাইয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘একটি মহল কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। এ ধরনের বিভাজন থেকে বিরত থাকতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে এডিটরস গিল্ড।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর মিরপুরে মো. ফজলু হত্যার ঘটনায় ভাসানটেক থানায় দায়ের করা এক মামলায় শ্যামল দত্ত আসামি। আর যাত্রাবাড়ীতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার হত্যা মামলার আসামির তালিকায় রয়েছে মোজাম্মেল বাবুর নাম।

ঢাকায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে কি না– জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের নামে তো ঢাকায় মামলা আছে। ঢাকার বাইরেও একটি মামলা আছে। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে তাদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া হয়ে সপরিবারে ভারতে যাওয়ার সময় শ্যামল দত্তকে আটকে দিয়েছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরপর থেকে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আর মোজাম্মেল বাবু সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন।

এর আগে গত ২১ আগস্ট ফ্রান্সে যাওয়ার চেষ্টার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয় সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপাকে। শাকিল একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা প্রধান এবং রূপা একই টেলিভিশনের প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট ছিলেন। দুটি হত্যা মামলায় দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল, সেখানে শাকিল ও রূপার নামও ছিল। সরকার পতনের পরপর গত ৮ আগস্ট শাকিল ও রূপাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় একাত্তর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

জেইউ/এসএসএইচ