বিগত সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা এসব সংস্থার সদস্যদের হাতে ‘জোরপূর্বক গুম হওয়া’ ব্যক্তিদের সন্ধানে গঠিত কমিশনের কাজ কী হবে, তা জানিয়েছে সরকার। তদন্ত করে তিন মাসের মধ্যে এই কমিশনকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এছাড়া, অন্যান্য কাজ ‍সুনির্দিষ্ট করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অনুরূপ যেকোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি কর্তৃক ‘আয়নাঘর’ বা যেকোনও জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, বলপূর্বক গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান এবং জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ সম্পাদন করবে কমিশন।

এর আগে, পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্যরা হলেন, হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজ নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।

যেসব কাজ করবে তদন্ত কমিশন

ক. ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যেকোনও বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি কর্তৃক ‘আয়নাঘর’ বা যেকোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা এবং কোনো পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করা এবং সে উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা।

খ. জোর করে গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা এবং এ বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া;

গ. জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়স্বজনকে অবহিত করা;

ঘ. জোর করে গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করা;

ঙ. জোর করে গুম হওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ দেওয়া;

চ. জোর করে গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ দেওয়া এবং

ছ. ওপরে বর্ণিত উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট যেকোনও কাজ করা।

এছাড়া, কমিশনের কাজের পরিধি সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে:

১. তদন্ত কমিশন বাংলাদেশের যেকোনও স্থান পরিদর্শন এবং যেকোনো ব্যক্তিকে কমিশনে তলব করতে ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।

২. তদন্ত কমিশন কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ অনুসারে তদন্তকাজ সম্পন্ন করে এই প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

৩. মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তদন্ত কমিশনকে সাচিবিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা দেবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে। এ ছাড়া কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যেকোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে পারবে।

৪. তদন্ত কমিশনের সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক এবং কমিশনের সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের মর্যাদা এবং অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।

৫. ২০২৪ সালের ২৭ আগস্টের প্রজ্ঞাপন রহিত করা হলো এবং ওই রহিত প্রজ্ঞাপনের অধীনে করা কাজ এই প্রজ্ঞাপনের অধীনে গণ্য হবে।

এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে।

কেএ