কুমিল্লা ও ফেনী জেলায় সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০০ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে আমন ধানের চারা বিতরণ করেছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক (প্রকল্প-প্রশিক্ষণ) ও গণসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আশিকউজ্জামান জানান, চারা সংগ্রহের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন কুমিল্লা রেঞ্জ কমান্ডার পরিচালক আশীষ কুমার ভট্টাচার্য। পরে মহাপরিচালক ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে ২০০ জন কৃষকের মধ্যে ও পরশুরাম পাইলট হাইস্কুল মাঠে পরশুরাম উপজেলার ১০০ জন কৃষকের মধ্যে ধানের চারা বিতরণ করেন।

দুপুরে তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালবাগ রওশন আশরাফ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ জন কৃষকের মধ্যে ধানের চারা বিতরণ করেন।

আমন ধানের চারা বিতরণ সম্পন্নের পর তিনি কুমিল্লা রেঞ্জ ও জেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। মধ্যাহ্ন ভোজের পর মহাপরিচালক কুমিল্লা রেঞ্জের অধীন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে রেঞ্জ কার্যালয় প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ ও পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন।

আশিকউজ্জামান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের কৃষকদের দুর্দশা দূরীকরণে সময়োচিত এ চারা বিতরণ পদক্ষেপ আসন্ন আমন মৌসুমে কিছুটা হলেও স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করবে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত শৃঙ্খলা বাহিনী। সমগ্র দেশের গ্রামে গ্রামে এই বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা বিস্তৃত হয়ে বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের সেবায় কাজ করছে।

যেহেতু আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে আছে, তাই যেকোনো দুর্যোগ কিংবা দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে এই বাহিনী কম সময়ে সুশৃঙ্খলভাবে যেকোনো সেবা কিংবা সহযোগিতা পৌঁছে দিতে পারে। এবারের বন্যায় কৃষকদের বীজতলার জমি প্লাবিত হওয়ায় ধান চাষ নিয়ে বিরাট অনিশ্চয়তায় ছিলেন কৃষকরা। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ খাদ্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এ পরিস্থিতি অনুধাবন করে আগে থেকেই বাহিনীর মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট জেলা কমান্ড্যান্টদের যেসব অঞ্চল প্লাবিত হয়নি সেসব এলাকায় আনসার-ভিডিপি সদস্যদের মাধ্যমে ধানের বীজতলা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ফলে বন্যা-পরবর্তী সময়ে কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য তিনি আমন ধানের চারা তুলে দিতে পেরেছেন।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে কৃষকরা যখন বীজতলা তৈরির জমির অভাবে বিপর্যস্ত তখন আনসার বাহিনীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বীজতলা থেকে চারা উৎপাদন করে ক্ষতিগ্রস্ত দুই জেলার কৃষকদের মধ্যে চারা বিতরণ করে মোট ১০০ একর জমি আমন চাষের আওতায় নিয়ে আসে। পর্যায়ক্রমে আরও বেশি সংখ্যক কৃষকদের পুনর্বাসনের আওতায় আনার পরিকল্পনাও বাহিনীর রয়েছে। তাছাড়া ভালো ফলন নিশ্চিত করতে আনসার বাহিনীর পক্ষ থেকে কৃষকদের মধ্যে সার, কীটনাশক থেকে শুরু করে সবজি চাষের উপকরণও আগামীতে বিতরণ করা হবে।

জেইউ/এসএসএইচ