দুদক সংস্কার : সবার আগে প্রয়োজন নেতৃত্বের পরিবর্তন ও আইনি সংস্কার
সবার আগে দুদকের নেতৃত্বের পরিবর্তন প্রয়োজন। বর্তমান নেতৃত্ব পর্যায়ে যারা আছেন তাদের দ্বারা দুদকের ভালো কার্যক্রম কখনোই আশা করা যায় না। এরপর প্রয়োজন আইনি সংস্কার। সংস্থাটিকে এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে; যাতে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক যে সক্ষমতা আছে তা শুদ্ধতর হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ঘোষণা দেন।
দুদকের সংস্কার কমিশনের প্রধান ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ মুহূর্তে দুদকের সবার আগে প্রয়োজন নেতৃত্বের পরিবর্তন। বর্তমান নেতৃত্ব দ্বারা দুদকের ভালো কার্যক্রম কখনোই আশা করা যায় না। এরপর প্রয়োজন আইনি সংস্কার। কারণ, এর আগে আইনি সংশোধনের নামে দুদককে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে, সে জায়গাটা ঠিক করা প্রয়োজন রয়েছে। তৃতীয় হচ্ছে চেয়ারম্যান ও কমিশনারের নিচে মহাপরিচালক থেকে পরিচালক পর্যন্ত প্রায় শতভাগের কাছাকাছি প্রেষণে আসা আমলাতন্ত্রের প্রতিনিধি। দুদকে বসে আমলাতন্ত্রে আনুগত্য প্রকাশ করে আমলাতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করে। কাজেই এই প্রথা বন্ধ করতে হবে।
দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক ভালো জনবল রয়েছে দুদকে, তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। আবার অনেকে আছে দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি দুদকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আধুনিক ল্যাব করা দরকার। যদিও ফরেনসিক ল্যাব রয়েছে, যেটা এতটা কার্যকর নয় বলেই জানি। নতুন নতুন দুর্নীতির পদ্ধতি যোগ হচ্ছে, সেই সম্পর্কে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে মৌলিক একটি বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার। এর মধ্যে দুদক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আমি যতটুকু জানি আমার সঙ্গে কাজ করার জন্য সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটা যখন হবে তখন আমরা এর কর্মপরিধি ও কীভাবে কাজ করা হবে, সে বিষয়ে অবগত হব।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালে দুদক প্রতিষ্ঠা করার পেছনে টিআইবির ভূমিকা ছিল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত দুদকের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক যে সক্ষমতা রয়েছে, তা মানুষের আস্থা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদ বিকশিত ও ধরে রাখা কিংবা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় অন্যতম হাতিয়ার ছিল দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। সম্পদের আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের মাধ্যমে একটি যুগ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে রাজনৈতিক, প্রশাসন কিংবা ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশে যে স্বপ্ন দেখেছি, সেখানে দুর্নীতি থাকবে সেটা কেউ চায় না।
মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে হবে যার পেশাগত, ব্যক্তিগত জীবন অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত। বিশেষ করে তাকে দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। দুদকের সব পর্যায়ের নিয়োগ বিশেষ করে, উচ্চপর্যায় বা কমিশন; তাদের নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিকভাবে যারা ক্ষমতায় থাকবেন তাদের মধ্যে যেন এই মানসিকতা সৃষ্টি হয় দুর্নীতি যেই করুক না কেন তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই মানসিকতা বা এর গ্রহণযোগ্যতা যদি সৃষ্টি না হয় তাহলে ক্ষমতায় যারা থাকবেন তারা কোনো না কোনোভাবে দুদকের প্রতি চাপ সৃষ্টি করবেন। দুদক সংস্কারের পাশাপাশি একাধিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গন ও আমলাতন্ত্রে সংস্কার অত্যন্ত অপরিহার্য।
আমলাতন্ত্রের মধ্যে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে ইফেতাখারুজ্জামান বলেন, আমাদের দায়িত্ব দুদকের সংস্কার প্রস্তাবনা করা। এই প্রস্তাবনার উপর দুদক প্রতিষ্ঠিত হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। কারণ, সরকারের হাতে কর্তৃত্ব থাকবে। সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয় দুদক। যদিও সরকার মানে জনগণের সরকার। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে যারা ক্ষমতায় যান তারা জনগণের কথা ভুলে যায়। এর বিভিন্ন দৃষ্টান্ত আপনারা দেখতে পারছেন।
তিনি আরও বলেন, এখন অনেক ক্ষেত্রেই পালাবদল শুরু হয়েছে। আচরণের বদল হয় নাই। দলবাজি, দখলবাজি হচ্ছে। এমনকি আমলাতন্ত্রেও দখলবাজির মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।
আরএম/এমজে