ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলনের চেষ্টা করায় আব্দুল হান্নান নামে এক ফায়ার ফাইটারকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবার।

ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে ফেরার পথে ফায়ার ফাইটার আব্দুল হান্নানকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়।

এদিকে, ডিবি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট মামলায় আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর খোঁজে এসে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন হান্নানের স্ত্রী ফাতেমা খন্দকার নওরিন।

তিনি বলেন, আমার স্বামী আব্দুল হান্নান গতকাল ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে এসেছিল। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। গত রাত ১১টার দিকে হান্নান আমাকে ফোন করে জানিয়েছে, আমি ডিবিতে আছি। আগামীকাল (বুধবার) ১১টার দিকে এসে আমাকে নিয়ে যাও। কিন্তু আজ ডিবিতে আসার পর জানায় তারা কেউ হান্নানকে আটক করেনি। হান্নানের অপরাধ সে ফায়ারের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনের ২০০ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছে।

নওরিন আরও বলেন, আমি এই ডিজির পদত্যাগ দাবি করছি। আমার ছোট দুইটা বাচ্চা আছে। আমি এখন কী করব।

তিনি দাবি করেন, তার স্বামীকে গুম করা হয়েছে। কারণ তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।

নিখোঁজ ফায়ার ফাইটারের স্ত্রী নওরিন আরও বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমার স্বামীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে আবার আমার স্বামীকে বলেছে, সদর দপ্তরে এসে আবেদন দিতে। তাকে সদর দপ্তর থেকে বের হওয়ার পর ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়েছে। এখন পর্যন্ত আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।

এদিকে ফায়ার ফাইটার আব্দুল হান্নানের স্ত্রীর সঙ্গে সহকর্মীর সন্ধানে ডিবি কার্যালয়ের সামনে এসেছেন ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ পরিদর্শক রেজায়ে রাব্বি। তিনি বলেন, ১৩ বছর আগে আমি ও নিখোঁজ হান্নান ফায়ার সার্ভিসে যোগ দিই। সে আমার ব্যাচমেট।

রাব্বি নিজেও হয়রানির শিকার দাবি করে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের দুই ভাই আনিস ও সালাউদ্দিন সারা দেশে ঘুরে ঘুরে বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্য এবং মালামাল কেনায় নানা অনিয়ম করে আসছে। এই সিন্ডিকেটকে টাকা না দিলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বারবার বদলি করা হয়। টাকা না দেওয়ায় আমাকে গত দুই বছর ১০ মাসের মধ্যে পাঁচ বার বদলি করা হয়। এমন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে পাইনি। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন দিলে আমাকে হয়রানি না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেটিও মানা হয়নি। আমি হয়রানি বন্ধে আদালতেও রিট করেছি। এই রিট চলমান রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জেইউ/এসএসএইচ