হাবের কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি
হজ প্যাকেজ ৫ লাখের মধ্যে আনার দাবি এজেন্সি মালিকদের
আগামী বছরের জন্য হজ প্যাকেজ ৫ লাখ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশের (হাব) সাবেক মহাসচিব এম এ রশিদ শাহ সম্রাট।
তার অভিযোগ, হাবের পলাতক সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের সিন্ডিকেটের কারণে হজের খরচ ৭ লাখে পৌঁছেছে। ফলে গত কয়েক বছর ধরে নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বিজ্ঞাপন
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সাবেক এ হাব নেতা। বৈষম্য বিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন কয়েকজন এজেন্সি মালিক।
সংবাদ সম্মেলনে রশিদ শাহ সম্রাট বলেন, হজ পবিত্র ইবাদত। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল একটি দেশ। অথচ সৌদি সরকার ভিসা ফিসহ নানা খাতে প্রায় ৬ লাখ রিয়াল (সৌদি স্থানীয় মুদ্রা) নিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও হাবের পক্ষ থেকে সৌদি সরকারের এ খরচ কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হাবের সভাপতি তসলিম ছিলেন নিজের পকেট ভারী করা নিয়ে ব্যস্ত। বিমানের প্যাকেজ যখন ঘোষণার সময় আসত তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে চলে যেতেন। আবার হজের ফ্লাইট শুরু হওয়ার আগে দেশে আসতেন।
আরও পড়ুন
রশিদ সম্রাট অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে থেকে সৌদি আরবের বিমান ভাড়া কখনো ২ লাখ টাকা হতে পারে না। এই ইস্যুতে আগের সরকার ও হাব জোরালো ভূমিকা রাখেনি। কারণ তসলিম নিজেই ফ্লাইনাস এয়ারের বাংলাদেশে এজেন্ট ছিলেন। এই বিমানটি মূলত বাজেট ক্যারিয়ার (কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন) করে। তারা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় হজের যাত্রীর নেওয়ার কথা থাকলেও নিয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা করে। আমরা পবিত্র এই ইবাদত ঘিরে যে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে তা ভাঙার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে হাবের বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।
তার অভিযোগ, চলতি বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হাবের নির্বাচনে তৎকালীন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কোনো প্রার্থী অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তাই আমরা মনে করি, এখন যে হাব আছে সেটি স্বৈরাচার সরকারের দোসর, তসলিমের দোসর। তাই এই কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তসলিমের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্য বিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের পক্ষে আহ্বায়ক আকতার উজ্জামান বলেন, গত ৮ বছর হাবে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে সভাপতি হয়েছেন এম. শাহাদাত হোসেন তসলিম। তিনি বর্তমান যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এখন তিনি পলাতক থাকলেও তার সহযোগীরা আসন্ন হজ মৌসুমে সিন্ডিকেট করার অচেষ্টা করছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল হাবকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তিনি বলেন, গত ৪ বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করেই সংগঠন বিধিমালার লঙ্ঘন করেছে। তারা অননুমোদিতভাবে হাবের অর্থ ব্যয় করেছে।
তসলিম ২০১৭-২০২৪ সাল পর্যন্ত হজের জন্য ১ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ৫৬ এজেন্সির কাছে হাজিদের জিম্মি করা, এজেন্সি কোটা ২৫০ জনে চাপিয়ে দেওয়া, হজ ব্যবস্থাপনা, আপদকালীন ফান্ড, প্রশিক্ষণ, বারকোড ভিসা ও বিমান টিকিট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। থার্ড ক্যারিয়ারের পরিবর্তে তিনি ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সকে হজের মধ্যে প্রবেশ করেন। তিনি এ বিমানের বাংলাদেশ এজেন্ট। ডাইনেস্টি ট্রাভেলসের মাধ্যমে হাজিদের পে অর্ডারের টাকা গ্রহণ করতেন। হাব পল্লী নামে আমিন বাজারের সদস্যদের জন্য গৃহায়ণের নামে কোটি কোটি টাকা লুট ও আত্মসাৎ করেছেন। জাল ভোট ও পাতানো নির্বাচন করে অবৈধভাবে পর পর ৪ টার্মে মোট ৮ বছরের জন্য হাবের সভাপতি, মহাসচিব ছিলেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়ার সম্ভব হয়নি।
হাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী ঢাকা পোস্টকে বলেন, হজের খরচ কমানোর দাবি সব সময় ছিল। আর বিমান ভাড়া কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করিনি, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রতি বছর বিমান ভাড়া নিয়ে বিমানের সঙ্গে আমাদের ঝগড়া পর্যন্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, হজের খচর ও বিমান ভাড়া কমানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও বর্তমান ধর্ম উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছি।
বিমানের টিকিটে গত ৮ বছরের কোনো সিন্ডিকেট হয়নি দাবি করে শরাফতী বলেন, যারা এই অভিযোগ করছেন তারাই এক সময় বিমান টিকিটের সিন্ডিকেট, হাজী রিপ্লেস ও টলি বাণিজ্য করতেন। এগুলো আমরা বন্ধ করেছি। আগে হজে গেলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লাগতো। ২০১৮ সালে আমরা সেটা বাতিল করিয়েছি।
হাজিদের নিয়ে সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই দাবি করে শরাফতী বলেন, হাজিরা যেখানে ভালো সেবা পাবেন সেখানেই যাবেন। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত। হাবের নির্বাচন করার সময় হেফাজত, বিএনপির ট্যাগ দেওয়ার হয়েছে, এখন আওয়ামী লীগের লোক বানানো হচ্ছে। অথচ আমরা কোনো রাজনীতিই করি না। যারা অভিযোগ করছেন তারাই শেখ হাসিনার সেই ৪০০ কোটি টাকার পিয়ন জাহাঙ্গীরকে দিয়ে তাদের পক্ষে কাজ করিয়েছেন। আকতার উজ্জামান হাবের নির্বাচন বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনিই এখন অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে সিন্ডিকেট হয়েছে।
এনএম/এসকেডি