চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) হিসাবরক্ষক মাসুদুল ইসলামের ঘুষ গ্রহণের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে আইনজীবীরা বলছেন, এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তফশিলভুক্ত অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তবে তার পাশাপাশি অবশ্যই দুদককে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

সম্প্রতি চসিকের হিসাবরক্ষক মাসুদুল ইসলামের ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যদিও ভিডিওটি কয়েক বছর আগের বলে জানিয়েছে সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

ভিডিওতে দেখা যায়, ঠিকাদারকে বিলের চেক বুঝিয়ে দিচ্ছেন মাসুদুল ইসলাম। সামনের জন চেক নিতেই দুটি ৫০০ টাকার নোট মাসুদুলের হাতে তুলে দিলেন। দ্রুত ওই টাকা প্যান্টের পকেটে ঢোকান মাসুদুল। পাশের আরেকজন ঠিকাদারও চেক নিয়ে ঘুষের টাকা বুঝিয়ে দিলেন। সেটিও কোনো রাখঢাক না করেই প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেন মাসুদুল।

এ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে নড়েচড়ে বসে চসিক কর্মকর্তারা। ঘটনার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠন করে চসিক। একই সঙ্গে মাসুদুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে ঘুষ গ্রহণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এ কারণে মাসুদুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, মাসুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মাসুদুলকে চসিক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০১৯ এর বিধি ৪৯ দফা (খ) অনুসারে গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে কেন তাকে বিধি মোতাবেক উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ গ্রহণ দুদকের তফশিলভুক্ত অপরাধ। এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তবে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে আইনগতভাবে অবশ্যই ফৌজদারি মামলা করতে হবে। এই মামলা করবে দুদক। এক্ষেত্রে দুদক নিজেরা চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। আবার সিটি কর্পোরেশনেরও উচিৎ ছিল তাদের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দুদককে অবহিত করা। 

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা তার নিয়োগকারী কতৃপক্ষ। তাকে আমরা গুরু বা লঘুদণ্ড দিতে পারি। তবে দুদক চাইলে তারা নিজেদের মতো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে চিঠি বা প্রতিবেদন পাঠানোর দরকার নেই। এ কারণে আমরা পাঠাইনি।

এ প্রসঙ্গে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার বিষয়ে চসিক থেকে আমাদের অবহিত করা হয়নি। তবে ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি আমরা প্রধান কার্যালয়ে জানিয়েছি। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসলে আমরা অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে পারব।

এমআর/এমজে