বিধিবহির্ভূত ৪৩তম বিসিএস নন ক্যাডার ফলাফল বাতিলসহ চূড়ান্ত ফলাফলের আগ পর্যন্ত শূন্য পদে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন নন-ক্যাডার প্রার্থীরা।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

বক্তব্যে নন-ক্যাডার প্রার্থী সাদিয়া তানজিম বলেন, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) মূলত ক্যাডারভুক্ত পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করত। পরে বিপিএসসি নন-ক্যাডার পদেও নিয়োগের সুপারিশ শুরু করে, যার ফলে ২০১০ সালে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা প্রণীত হয়। এতে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সরকারি সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। ২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত পদ স্বল্পতার কারণে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে দক্ষ প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়, যা সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সহায়তা করছে।

তিনি বলেন, বিপিএসসি ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা রেকর্ড ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জন প্রার্থী আবেদন করে। ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২২ সালের ২০ জানুয়ারি ফলাফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে ১৫ হাজার ২২২ জন উত্তীর্ণ হন। এরপর, ২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষায় ৯৮৪৬ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। ভাইভা পরীক্ষাও গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চলে।

৪৩তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার ফলাফল একসঙ্গে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়, যা ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তির প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে। এ অবস্থায়, আমরা বিপিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করি এবং স্মারকলিপি দেই। কোনো সাড়া না পেয়ে ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর বিপিএসসি চত্বরে মানববন্ধন করি।

এরপর ১৪ ডিসেম্বর রাতে বিপিএসসি ১৩৪২টি নন-ক্যাডার পদ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা বৈষম্যমূলক মনে করে ১৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ জানাই। এরপরেও ২৬ ডিসেম্বর একইসঙ্গে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করা হয় যেখানে পূর্ণাঙ্গ তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি, যা বিধিমালার পরিপন্থি। দীর্ঘ তিন বছরের অপেক্ষার পর, বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (পিএসসি) এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে। ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডারেরও ফলাফল একত্রে প্রকাশ করা হয়, যা আমাদের জন্য বৈষম্যপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত।

১৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার পদের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৩৪২টি পদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হলেও চূড়ান্ত ফলাফলে ৬৪২ জনকে সুপারিশ করা হয়। বিপিএসসি নন-ক্যাডার প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ না করে ৬৪২ জনকে সুপারিশ করেছে যা বিধিবহির্ভূত। অথচ ৪১তম ও ৪০তম বিসিএসে যথাক্রমে ৩৬৬৪ এবং ৩৬৫৭ উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়েছিল। এই বৈষম্যের চিত্র আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। 

বৈষম্য নিরসনে যেসব দাবি তোলা হয় সেগুলো হলো-

১. ভাইভায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হননি এমন প্রার্থীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ এবং বিধি বহির্ভূত ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার ফলাফল বাতিল করা।

২. ২০২৩ এর নন-ক্যাডার বিধি বাতিল করে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ২০১০ এবং ২০১৪ এর সংশোধিত বিধি অনুযায়ী সুপারিশ করা।

৩. নতুনভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অধিযাচন পাঠিয়ে অধিক সংখ্যক পদ এনে ৪৩তম বিসিএসে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে নন-ক্যাডার পদে সুপারিশের ব্যবস্থা করা।

ওএফএ/এমএ