বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা নিম্নচাপটি উত্তরপশ্চিমে অগ্রসর হয়ে আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রোববার (০৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক এর দেওয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। নিম্নচাপটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

সংস্থাটি জানায়, নিম্নচাপটির বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা/ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারবেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, সাগরের নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপ হয়ে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাতে ভারতের উড়িশা ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে পারে। পরিবেশ কিছুটা অনুকূল থাকায় এটির সাধারণ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ারও কিছুটা আশঙ্কা রয়েছে। তবে এর থেকে বাংলাদেশ নিরাপদ।

বেসরকারি এই সংস্থাটি জানায়, সাগরে এই নিম্নচাপটি  এবং দেশের উপর মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তা কম থাকায় দেশের সার্বিক বৃষ্টির পরিমাণ কম হবে। তবে নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করার সময় ও পরে দেশে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। এই নিম্নচাপটি আঘাতের সময় পশ্চিমবঙ্গ, উড়িশা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপটির মাধ্যমে শক্তিশালী মৌসুমী বৃষ্টি বলয় পূবালী অথবা মহাবৃষ্টি বলয় ঢল দেশে প্রবেশ করতে পারে আগামী ১০ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এর ফলে সারাদেশে একপ্রকার ব্যাপক ভারী বর্ষণ হতে পারে। তবে এটির প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে কোনো উল্লেখযোগ্য ঝড়ের আশঙ্কা নেই।

বন্যার সতর্কতায় বিডব্লিউওটি জানায়, এই নিম্নচাপ ও একইসাথে চীন সাগর থেকে আসা একটি নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের উপর মৌসুমী অক্ষরেখা প্রবল সক্রিয় থাকতে পারে। এই অবস্থায় ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যসহ বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা বিভাগে ব্যাপক ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। এর ফলে দেশের পূর্ব, উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলে পুণরায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার জেলাসহ সিলেট বিভাগের নিচু এলাকার মানুষজন আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিয়ে রাখতে পারেন জানিয়েছে সংস্থাটি। অপরদিকে এটি পরবর্তীতে ভারতের মধ্য ও উত্তর মধ্য অঞ্চলে ব্যাপক ভারী বৃষ্টি ঘটাতে পারে। এরফলে গঙ্গা অববাহিকায় বন্যা হতে পারে।

এসআর/এমটিআই