রাজধানীর গুলশান-২ এলাকার ফাইন্যান্স স্কয়ার নামে একটি বহুতল ভবনে এক্সিম ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও সেই চেষ্টা নস্যাৎ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সঙ্গে ১০ ডাকাতকে হাতেনাতে আটক করা হয়।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক সোয়া ১টার দিকে ৭০ থেকে ৮০ জনের সংঘবদ্ধ একটি দল ফাইন্যান্স স্কয়ার ভবনের পাশের গলিতে অবস্থান নিয়েছিল। বহুতল ভবনটিতে ঢোকার আগে কেটে ফেলা হয় সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ। এরপর তারা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্নভাবে ভবনের ভেতরে ঢোকে। সেসময় ভবনটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫০ জন নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন।

নিরাপত্তা প্রহরীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে ডাকাতদল। পরে প্রধান ফটক, রিসিপশনে নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করা হয়। ১০ থেকে ১১ জনের হাতমুখ বেঁধে বাকিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দ্বিতীয় তলায় এক্সিম ব্যাংকে ঢোকে ডাকাত দলের একটি গ্রুপ।

এরপর সেখানে ভাঙচুর চালানো হয়, বুথ ভেঙে টাকা সরানোর চেষ্টাও করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১০ জনকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তবে বাকিরা পালিয়ে যায়। সেদিন রাতেই ঘটনাস্থলে যান এক্সিম ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশের উপস্থিতিতে রাতভর ডাকাতদের অবস্থান সন্দেহে ভবনটিতে তল্লাশি চালানো হয়। জব্দ করা হয় বেশ কিছু আলামত। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলাও দায়ের হয়েছে। 

পরদিন শনিবার দুপুরে সরেজমিনে ফাইন্যান্স ভবনে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি পৃথক সিকিউরিটি কোম্পানির নিরাপত্তা প্রহরীদের সেখানে নিযুক্ত করা হয়েছে। রাতে যারা ডিউটিতে ছিলেন তাদের রিলিজ করা হয়েছে। দিনের শিফটে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাতে দায়িত্বরতদের মধ্যে ১২ জন নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গুলশান-২ এর ১০৩ নং সড়কে অবস্থিত ২০ তলা বিশিষ্ট ফাইন্যান্স ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক্সিম ব্যাংকের অফিস। একই ভবনের পাঁচটি ফ্লোরে চলে পদ্মা ব্যাংকের কার্যক্রম। এ ছাড়া, আমেরিকান কোম্পানি ও বেসরকারি কয়েকটি কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

ফাইন্যান্স ভবন / ঢাকা পোস্ট

ভবনটির নিরাপত্তা ম্যানেজার মাইনুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত শুক্রবার রাত আনুমানিক ১টার দিকে ফাইন্যান্স স্কয়ার ভবনের প্রধান ফটকের বেরিকেড ও দেয়াল টপকে ভেতর ঢুকে পড়ে অর্ধশতাধিক বহিরাগত। তারা প্রথমেই সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ কেটে দেয়। কোনো কোনো স্থাপনা ভেঙে ফেলে। এরপর খুব দ্রুতগতিতে তারা নিরাপত্তাকর্মীদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এরপর তারা দ্বিতীয় তলায় এক্সিম ব্যাংকে ঢোকার চেষ্টা করে। সেখানে ভাঙচুর চালানো হয় ও বুথ ভেঙে ফেলা হয়।

রাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এক নিরাপত্তা প্রহরী জানান, মধ্যরাতে এই এলাকায় এমন ঘটনা ঘটবে, কখনো ভাবিনি। সাধারণত রাত ১২টার পর এই এলাকা শান্ত হয়ে যায়। শুক্রবার রাতে যারা এসেছিল, তাদের কাউকে আগে কখনো দেখিনি। এই গুলশান এলাকার কেউ বলেও মনে হয়নি।

তিনি বলেন, দুটি গাড়ি ও বেশ কয়েকটি বাইক নিয়ে প্রথমে ফাইন্যান্স স্কয়ারের পাশের গলিতে অবস্থান নেয় অর্ধশতাধিকেরও বেশি মানুষ। এরপর দেয়াল ও বেরিকেড টপকে ভবনে ঢুকে পড়ে তারা। অধিকাংশের মুখে ছিল মাস্ক। আমাকেসহ বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীকে হাতমুখ বেঁধে মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় এলাকাবাসী এগিয়ে আসে। তাদের মধ্যেই কেউ হয়ত পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছিল। পুলিশও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে গুলশান থানার ওসি মো. তৌহিদ আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ। ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এক্সিম ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ জনকে রোববার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রিয়াজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কে বা কারা ডাকাতি করতে এসেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা কেউই গুলশান এলাকার নন। জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করা হবে, নেপথ্যে কে বা কারা ছিল।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে একটি বিষয় জানতে পেরেছি— এক্সিম ব্যাংকের ওই শাখায় ঋণ সংক্রান্ত কারো সঙ্গে ঝামেলা ছিল। তার নেতৃত্বেই এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে অন্যান্য সম্ভাব্য সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।

ফাইন্যান্স স্কয়ার ভবনে এক্সিম ব্যাংকের নারী শাখা। ওই শাখার রিলেশনশিপ ম্যানেজার (ভাইস প্রেসিডেন্ট) সামসুন তামান্না জান্নাত শিমলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফাইন্যান্স ভবনের নারী শাখায় শুক্রবার রাতে ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় আমরা একটি মামলা করেছি। যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানিয়েছি।

ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কারো যোগসাজশ কিংবা কোনো ঋণগ্রহীতা বা ঋণখেলাপি নেপথ্যে থেকে এই কাজ করিয়েছে বলে আপনারা সন্দেহ করছেন কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। যা জানানোর পুলিশকে জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার ৯ জন চার দিনের রিমান্ডে, একজন হাসপাতালে

ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় গুলশান থানায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- আশরাফ রহমান, আশেকুর রহমান, মো. আলমাছ, মো. সোহেল, মো. রতন ইসলাম, সৈয়দ শহিদ, মো. হারুন অর রশিদ, মো. রায়হান সরকার, মো. শরিফুল ইসলাম ও আহম্মেদ হোসেন।

মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আজ (রোববার) ৯ জনকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বাকি একজন অসুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।

জেইউ/এমজে