সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে নেছার উদ্দিন, এখন পোস্টার সাঁটিয়েছেন বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে। ছবি- সংগৃহীত

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী ছিলেন মো. নেছার উদ্দিন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর তিনি এখন বিএনপির লোক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে অস্ত্রবাজি করা মো. শিবলুও এখন বিএনপির লোক বলে পরিচয় দেন। তাদের মতো অনেককেই এখন দলে ভেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম আনোয়ারার উপজেলার বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন। 

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, হেলাল উদ্দিন একসময় আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। উপজেলার আরেক বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির আনচারকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে তিনি দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। যেটি চট্টগ্রাম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। 

পরবর্তীতে তদবির করে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরে পান হেলাল উদ্দিন। যদিও বর্তমানে তিনি নিজেকে সদস্য সচিব বলে পরিচয় দিচ্ছেন। এ পরিচয়ে তিনি অংশ নিচ্ছেন নানা অনুষ্ঠানে। নিজেও আয়োজন করছেন একাধিক অনুষ্ঠান। এসব আয়োজনের ব্যানারে নিজের পদবি হিসেবে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব উল্লেখ করছেন তিনি। যেটি নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

আনোয়ারা উপজেলার কয়েকজন বিএনপি নেতা জানান, দীর্ঘদিন এই এলাকায় সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এই সাংসদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল হেলাল উদ্দিনের। অভিযোগ রয়েছে মূল বিএনপির লোকজনকে বাদ দিয়ে জাবেদ চৌধুরী অনেকটা হেলাল উদ্দিনের মাধ্যমে বিরোধীপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এর পুরষ্কার হিসেবে কয়েকমাস আগে জাবেদের মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে নিয়ম ভেঙে ৬ কোটি টাকা লোন নেন হেলাল। 

আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করছে অথবা দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে থেকে সুবিধা নিয়েছে এরকম কাউকে বিএনপিতে না ভেড়ানোর জন্য দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও কেউ যদি এমন করে থাকে তাহলে তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। 

আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বলে পরিচয় দিচ্ছেন হেলাল উদ্দিন। যদিও তিনি দলের প্রাথমিক সদস্য বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ছবি- সংগৃহীত

হেলাল উদ্দিনের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা বিএনপির প্রবীণ এ নেতা বলেন, দলের এক নেতাকে ছুরিকাহত করায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এক বছর পর কোনোভাবে তিনি সদস্যপদ ফেরত পেয়েছেন। কিন্তু বহিষ্কৃত এ হেলালকে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। তাকে আমরা মেনেও নেইনি। তারপরও আমি শুনেছি তিনি নিজেকে উপজেলার সদস্য সচিব পরিচয় দেন। এটির মাধ্যমে তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন 

৫ লাখ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ হেলালের অনুসারী বিরুদ্ধে, ভিডিও ভাইরাল

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে মামুন খান নামে এক আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির এক নেতা বুঝে নিচ্ছেন ৫ লাখ টাকা। ভিডিওটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি সপ্তাহখানেক আগের। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম আজিজ ট্রেডিংকে চাঁদা দিতে চাপ দেয়। একপর্যায়ে সপ্তাহখানেক আগে মামুন খান আনোয়ারার বন্দর এলাকায় আজিজ ট্রেডিংয়ের অফিসে গিয়ে ৫ লাখ টাকা নেন।

যদিও ঘটনার বিষয়ে ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি আজিজ ট্রেডিংয়ের কোনো কর্মকর্তা। এ বিষয়ে কোনো গণমাধ্যমে কথা না বলার জন্য তাদের চাপ দেয় মামুন খান ও হেলাল উদ্দিন। তবে চাঁদা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আজিজ ট্রেডিংয়েরই এক কর্মকর্তা। 

আনোয়ারার বিএনপি নেতারা জানান, মামুন খান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তবে তিনি হেলাল উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। আবার দুজনের বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলালের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

এদিকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বিএনপি নেতা মামুন খান জনসম্মুখে কম আসছেন। অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান তিনি। বন্ধ রয়েছে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনও। একারণে কোনোভাবে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, মামুনকে আমি চিনি। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। চাঁদা আদায়ের এমন কোনো ভিডিও আমি দেখিনি। দেখলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন বলেন, চাঁদা আদায়ের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

এমআর/এমএসএ