পূর্বাচলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংরক্ষিত প্লট থেকে পুরো পরিবারের নামে মোট ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দ নিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরো প্রক্রিয়াটি করা হয় অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে। সরকার পতনের পরপরই এ সংক্রান্ত ফাইলগুলো রাজউকের রেকর্ড শাখা থেকে গোপনে সরিয়ে নিয়ে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল।

এই ফাইলগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনার নামে প্লট বরাদ্দের ফাইলের ওপর ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখা আছে ‘ভি-৩’, পাতা ১৪১। এটি একটি গোপনীয় ফাইল হিসেবে সরিয়ে নিয়ে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল রাজউকের রেকর্ড শাখা থেকে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতা বলে পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের জন্য এসব প্লট বরাদ্দ করা হয়। ২০২২ সালে শেখ হাসিনাকে প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি এতটাই গোপনীয়তার সঙ্গে করা হয় যে, রাজউকের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া অন্যরা এ নিয়ে কিছুই জানতেন না।

২০২২ সালের ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার নামে প্লটের বরাদ্দ পত্র ইস্যু করে রাজউক। পরে সেটি শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনের ঠিকানায় পাঠানো হয়।

সরকার পতনের পর শেখ হাসিনার প্লট বরাদ্দের ফাইলগুলো লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই ফাইলে আছে তার (শেখ হাসিনা) স্বাক্ষরসহ প্লট বরাদ্দের আবেদনের কপি, বরাদ্দ পত্রের অফিস কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র।

রাজউকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য বরাদ্দ করা প্লটের ফাইলগুলো সরকার পতনের পরপর খুব গোপনীয়তার সঙ্গে রাজউকের রেকর্ড শাখা থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও লুকিয়ে ফেলা হয়। পরে বিষয়টি অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানতে পারেন। এ নিয়ে রাজউকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যানের ড্রয়ারে এসব ফাইল রয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে ফের ‘ভি-৩ ফাইল’সহ সরিয়ে ফেলা ৬টি ফাইল আবার রাজউকের রেকর্ড শাখায় জমা করা হয়। বর্তমানে ফাইলগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালের ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার নামে প্লটের বরাদ্দ পত্র ইস্যু করে রাজউক। পরে সেটি শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনের ঠিকানায় পাঠানো হয়। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য রাজউকের জমি বরাদ্দের বিষয়টি কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউই জানতেন না। পরবর্তীতে গত মাসে সরকার পতনের পর বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এখন এসব প্লট থাকবে না বাতিল হবে- সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসবে, এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।

প্লট বরাদ্দের ফাইল সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য কাঠা প্রতি ৩ লাখ টাকা হিসেবে ১০ কাঠা প্লটের মূল্য ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন রাজউকের এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরিফ। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোনের ২৭ নম্বর সেক্টরে ২০৩ নম্বর রোডে শেখ হাসিনার জন্য বরাদ্দ করা প্লট নম্বর ০০৯। এ ছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের বরাদ্দ করা প্লট নম্বর ০১৫, সায়মা ওয়াজেদ পতুলের নামে বরাদ্দ করা প্লট নম্বর ০১৭। তাদের নামে যে বরাদ্দপত্র ইস্যু করা হয়েছে সেখানে স্বাক্ষর আছে রাজউকের এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার সে সময়ের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমানের।

এ ছাড়া সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানার প্লট নম্বর ০১৩, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির প্লট নম্বর ০১১, তার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকের নামে বরাদ্দ হওয়া প্লট নম্বর ০১৯।

জানা গেছে, রাজউকের সংরক্ষিত প্লট থেকে ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২৮৫ জনকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৪৯টিই পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, উচ্চ পর্যায়ের আমলা, ছাত্রলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেতারা। সে সময় ঢাকায় প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক জনপ্রতিনিধিদেরও প্লট বরাদ্দ দিয়েছিল রাজউক। এ বিষয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ভাষ্য ছিল, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই এভাবে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন তারা।

এএসএস/এমএ